শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাতেই নয়াপল্টনে বিএনপি

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

রাতেই নয়াপল্টনে বিএনপি

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। আজ সমাবেশ হলেও গতকাল রাতেই নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় সারা দেশ থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। একই দাবিতে রাজধানীর পৃথক নয় স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সমমনা দলগুলো। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চায় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। বাধা এলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। এই সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হতে পারে ঘেরাওসহ নতুন কর্মসূচি। এক দিন আগেই ‘লোকারণ্য’ নয়াপল্টন। গতকাল জুমার নামাজের পরপরই দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন এসব প্রান্তিক কর্মী। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। রাতে পুরো নয়াপল্টন এলাকা দলটির নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারা দেশ থেকে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের উপস্থিতিতে পুরো এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এসব নেতা-কর্মীর অনেকে পায়ে হাঁটার পাশাপাশি রিকশা ভাড়া করে মিছিল করেছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন তারা। এসব কর্মীর অধিকাংশ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। তবে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি থেকে বাঁচতে নানান কৌশল অবলম্বন করেছেন অনেকেই। তারা জানান, কেউ সবজির টুকরি সঙ্গে নিয়ে, কেউ আবার ভিসা পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ঢুকেছেন, কেউ আবার দুই দিন আগেই ঢাকায় এসে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিশোরগঞ্জ থেকে সবজি বিক্রেতা সেজে ঢাকায় এসেছেন আবদুল মালেক নামে এক বিএনপি কর্মী। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সবজি নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। কারওয়ানবাজারে সেগুলো বিক্রি করেছেন। রাতে ওখানেই ছিলেন। গতকাল দুপুরের পর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসেছেন। দলীয় কোনো পদ-পদবি না থাকলেও কেবল সমর্থন জানাতে একই পদ্ধতিতে গত বছর ১০ ডিসেম্বরও ঢাকায় প্রবেশ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির এই কর্মী। 

দিতে পারে ঘেরাওসহ নতুন কর্মসূচি : জানা যায়, সমাবেশ থেকে আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। কর্মসূচিতে ঘেরাওসহ তিন ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে। সচিবালয় বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে শুরু করা হতে পারে এই ধাপের কর্মসূচি। সারা দেশে তিন পথের অবরোধ ও সচিবালয় ঘেরাওসহ তিন ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে পর্যায়ক্রমে। নির্বাচন কমিশন, গণভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা অভিমুখে ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে ক্রমান্বয়ে। দলের হাইকমান্ড তারেক রহমান সমাবেশের আগে কর্মসূচি চূড়ান্ত করে জানিয়ে দেবেন। মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলে ৩০ অক্টোবর কিংবা তার পরদিন রাজধানীতে সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। আবার সচিবালয় অভিমুখের এ কর্মসূচিতে বাধা দিলে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে সেখানেই কঠোর অবস্থান কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জেলাপর্যায়ে একযোগে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টিও সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।

এ বিষয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান গণআন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে এবার বিদায়ের স্বাদ নিতেই হবে। সমগ্র দেশের  সর্বস্তরের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা সবাই আজ পরিবর্তন চায়। এই সরকারের পতনের জন্য ঘেরাও, সারা দেশে অবরোধ, হরতাল, অবস্থান, পদযাত্রা, সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলসহ যা যা প্রয়োজন সব ধরনের কর্মসূচিই পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। মানুষ এখন শুধু এই সরকারের বিদায়ের অপেক্ষায় আছে।  

জানা গেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে এত দিন চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচিতে ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব প্রদানের কথা বলা হলেও এতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে একযোগে চলবে আন্দোলন। এবারের এই ‘নন স্টপ’ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ‘ফয়সালা’ করতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট। মুখে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কথা বললেও কার্যত ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এবার বাধা দিলেই কঠোরভাবে তা প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে।

শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়াপল্টনের বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনেই আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ডিএমপি অন্য যেসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে, সেগুলোর জবাবে চিঠিতে জানানো হয়েছে- ১. তাদের সমাবেশটি বেলা ২টায় শুরু হবে, মাগরিবের আজানের আগে শেষ হবে। ২. সমাবেশে ১ থেকে সোয়া লাখ লোক হতে পারে। ৩. সমাবেশটি পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ৪. সমাবেশে পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত কিছু দূর অন্তর অন্তর মাইক লাগানো হবে। ৫. সমাবেশে বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন না এবং ৬. সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় দলের নিজস্ব ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন।

নয় স্থানে সমাবেশ সমমনাদের : সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলনে ঢাকার ৯টি স্থানে ‘মহাসমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো। গণতন্ত্র মঞ্চ : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকাল ৩টায়, ১২ দলীয় জোট : বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে দুপুর ২টায়, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট : পুরানা পল্টনে আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে দুপুর ২টায়, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ১২টায়, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি : নটরডেম কলেজের কাছে গণফোরাম চত্বরে বেলা ১২টায়,  এলডিপি : এফডিসির কাছে এলডিপি কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৩টায়, লেবার পার্টি : পুরানা পল্টন মোড়ে বিকাল ৪টায়, গণঅধিকার পরিষদ (নূর): বিজয়নগর পানির ট্যাংকির কাছে সকাল ১১টায়, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) : পুরানা পল্টন কালভার্ট রোডে বিকাল ৩টায়, এনডিএম :  মালিবাগ মোড়ে বেলা ১১টায়।

সর্বশেষ খবর