রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী

পুড়িয়ে মারার ইতিহাস বিএনপি-জামায়াতের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

পুড়িয়ে মারার ইতিহাস বিএনপি-জামায়াতের

গাড়ির টোল দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল পার হন প্রধানমন্ত্রী -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দেশের উন্নয়ন করি, বিএনপি-জামায়াত ধ্বংস করে। আগুনে জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার ইতিহাস বিএনপি-জামায়াতের। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মী হত্যা করেছে ওরা। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ      মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন শেষে আনোয়ারায় এক বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে টানেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে টানেল দিয়ে দক্ষিণের আনোয়ারা প্রান্তে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টানেলের টোল পরিশোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর আনোয়ারা প্রান্তে টানেলের নিরাপত্তাসহ যাবতীয় কারিগরি দিক পরিদর্শন করেন তিনি। ক্রমান্বয়ে তিনি স্মারক ডাকটিকিট ও মুদ্রা অবমুক্ত করেন। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের পাঁচটি প্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।

জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ওরা নানা হুমকি দেয়। ওইসব ভয়-ভীতি আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে লাভ নেই। বরং খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন বলেই ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিল। ওরা ভোট চোর। ওরা জনগণের অর্থ চোর। বিএনপি-জামায়াত মানে হলো খুনি, সন্ত্রাসী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে। উন্নয়নে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের আমলে চট্টগ্রাম ছিল সন্ত্রাসের রাজত্ব। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম এখন শান্তির জনপদ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার ছেলে তারেক রহমান ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল। কোটি কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। এর জন্য মামলা হয়েছে। সে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র-চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এর জন্য সাজা হয়েছে। গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত?।তিনি বলেন, মানুষের জন্য আমার বাবা রাজনীতি করে জীবন দিয়ে গেছেন। মানুষের জন্য কাজ করে যাব, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করব। আমার একটাই কাজ, দেশের মানুষের কল্যাণ করা। আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তিনি সমবেতদের উদ্দেশে বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজ কর্ণফুলী টানেল পেলেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই এত উন্নয়ন। তাই আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট চাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবার কাছে হাত তুলে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা চাইলে সবাই তাঁকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দেন।

জনসভায় চীনের রাষ্ট্রপতিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার এটি প্রথম টানেল। শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের আঞ্চলিক যোগাযোগে এটা ভূমিকা রাখবে। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এই টানেল হয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম শহরের যানজটের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী বৃহত্তর চট্টগ্রামে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর, আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে-৬ লেনে উন্নীত করার প্রকল্প, লালখান বাজার-পতেঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামে মেট্রোরেলও ইনশা আল্লাহ করে দেব।?চাক্তাই-কালুরঘাট চার লেনের আউটার রিং রোড নির্মাণ হচ্ছে। চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল হবে। নেপাল-ভুটান-ইন্ডিয়াও যাতে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারে সে পদক্ষেপ নিয়েছি। জলাবদ্ধতা দূর করতে ইতোমধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট আমরা নিয়েছি। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। সেই হিসেবে এসব আমরা তৈরি করছি। তিনি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, হাইটেক পার্কসহ চট্টগ্রামে গৃহীত নানা প্রকল্প উল্লেখ করে বলেন, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রায় সম্পন্ন। শিগগিরই কক্সবাজার যাবে। মহেশখালীতে ইকোনমিক জোন ও মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানা প্রকল্প হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বয়স্ক ভাতা, স্বামী নিগৃহীত ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিনা পয়সায় বই, বৃত্তি-উপবৃত্তি, মোবাইল ফোন চালুসহ আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উদ্বোধন করেছি। দ্বিতীয়টি শিগগিরই উদ্বোধন করব।? সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে এই সন্দ্বীপেও বিদ্যুৎ নিয়ে গেছি। বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত করছি। একসময় গরিবের নুন ভাত খাওয়ারও সুযোগ ছিল না। আজকে আল্লাহর রহমতে সেই ভাতের কষ্ট নাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষকে আমরা বিনা পয়সায় ঘর করে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ভূমিহীন মানুষকে ভূমি দিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের যুব সমাজের জন্য বহুমুখী ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি।? যারা বিদেশে যান, দয়া করে দালালকে টাকা দিয়ে যাবেন না।? আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি, কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। জামানত ছাড়া ঋণ পাবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন। নিজেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন।?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী আজ অর্থনৈতিক মন্দা। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশন চলছে। এ কারণে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে। তাই এক কোটি মানুষকে পারিবারিক কার্ড দিচ্ছি, সে কার্ডের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দামে চাল-ডাল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারবেন।?দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত রাস্তাঘাট করে দিচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সারা চট্টগ্রামে যত উন্নয়ন হয়েছে, আগের কোনো সরকারের আমলে তা হয়নি। করোনার সময় বিনা পয়সায় টিকা দিয়েছি।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আল্লাহ দুইটা সম্পদ দিয়েছেন আমাদের জন্য। একটা বঙ্গবন্ধু, তাঁকে পাঠিয়েছেন স্বাধীনতার জন্য। আরেকটা শেখ হাসিনা। উনাকে পাঠিয়েছেন এদেশের মানুষের উত্তরণের জন্য। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, এই দুজন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই সমাবেশে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তৃতা করেন- সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, এম এ ছালাম, শেখ আতাউর রহমান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর