রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
জড়িতদের গ্রেফতার দাবি

সাংবাদিকদের ওপর হামলায় নিন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দলটির নেতা-কর্মীদের হামলায় অন্তত ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন, সাংবাদিকরা রাজনৈতিক কর্মসূচির খবর সংগ্রহে যান পেশাগত দায়িত্ব পালনে। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নয়। তাই তাদের ওপর হামলা মত প্রকাশে স্বাধীনতায় বাধাস্বরূপ। নিজ নিজ দলের নেতা-কর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক করতেও আহ্বান জানান তারা।

এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)।

জানা গেছে, গতকাল বিএনপি মহাসমাবেশ চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দলটির নেতা-কর্মীরা। ওই সহিংসতার তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতে গেলে অন্তত ১০ জন সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। আহত পাঁচ সাংবাদিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার সময় ভাঙচুর করা হয়েছে ক্যামেরা, ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোন। পেশাগত দায়িত্বপালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং দুঃখজনক ঘটনা। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা কোনো দলের কর্মী হিসেবে নয়, বরং পেশাগত দায়িত্ব পালন করতেই রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে যান। ওই সময় তাদের ওপর হামলা চালানো কাক্সিক্ষত নয়। যারা এ কাজটি করেছেন, তারা কোনোভাবেই সাংবাদিকতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপ হতে পারে। তাই সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, পেশাগত দায়িত্বপালনে সাংবাদিকদের যেন কোনো বাধা না দেওয়া হয়, যেন হামলা না চালানো হয়। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালে সাংবাদিকরাও কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এই সাংবাদিক নেতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের টার্গেট করে আঘাত করাটা সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ নয়। বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা পাবে না। তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) যেটা হয়েছে, কোনো সাংবাদিক কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যায়নি, সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনেই গিয়েছিলেন। কেউ ছবি তুলছিলেন, কেউ তথ্য সংগ্রহ করছিলেন, কিন্তু তাদের ওপর জামায়াত-বিএনপির মিছিল থেকে হামলা চালানো হয়েছে। আমি মনে করি যাদের কর্মসূচি ছিল, এই হামলার দায় তাদেরই নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যেন তাদের কর্মীদের নির্দেশনা দেন, ভবিষ্যতে কোনো কর্মসূচিতে যেন সাংবাদিকদের ওপর হামলা না চালানো হয়।

বিএফইউজের নিন্দা : সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা জানান, শনিবার বিএনপির ডাকা সমাবেশে যোগ দেওয়া নেতা-কর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ চালাতে গেলে সেই দৃশ্য ধারণ করেন সাংবাদিকরা। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বিএনপি ও জামায়াত কর্মীরা। তারা হামলে পড়েন সাংবাদিকদের ওপর। সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা যাতে কোনো ছাড় না পায় সে জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিএফইউজের নেতারা।

ক্র্যাবের নিন্দা : সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)। গতকাল এক বিবৃতিতে ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল ও সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এই নিন্দা জানান। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নেতারা।

সর্বশেষ খবর