মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে এক রাতে দুই চিকিৎসক খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে এক রাতে দুই চিকিৎসক খুন

রাজশাহীতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে একজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক। অন্যজন গ্রাম্য চিকিৎসক। রবিবার গভীর রাতে এ দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

রামেক হাসপাতালের নিহত চিকিৎসকের নাম গোলাম কাজেম আলী (৪২)। তিনি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আর গ্রাম্য চিকিৎসকের নাম এরশাদ আলী দুলাল (৪৫)। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ কচুয়াতৈল এলাকায়। তাকে অপহরণের পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

রাজশাহীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চেম্বার শেষ করে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন ডা. কাজেম আলী। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজশাহী নগরীর বর্ণালী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ চিকিৎসক নগরীর উপশহর এলাকায় থাকতেন। তার স্ত্রীও একজন চিকিৎসক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে চেম্বার শেষ করে মোটরসাইকেলযোগে বাসায় ফিরছিলেন ডা. কাজেম আলী। বর্ণালী মোড়ে একটি মাইক্রোবাস তার গতিরোধ করে। এরপর মাইক্রোবাস থেকে দুর্বৃত্তরা নেমে তার বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, নিহত চিকিৎসকের লাশ গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কেন, কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত চলছে। হত্যাকারীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম জানান, তিনজন মাইক্রোবাস থেকে নেমে প্রথমে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে চিকিৎসক কাজেম আলীকে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার সঙ্গে একজন মোটরসাইকেল চালক ছিলেন। তার নাম শাহীন। তিনি গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালের মেডিকেল রিপ্রেজেনটিভ। তার সঙ্গে প্রায় যাওয়া আসা করতেন গোলাম কাজেম আলী আহমেদ। তিনি বলেন, একটি সিলভার কালার মাইক্রোবাস প্রথমে চিকিৎসক কাজেমকে বহনকারী মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে চালক বাধ্য হয়ে রাস্তার বাম পাশে মোটরসাইকেল দাঁড় করান। এরপর মাইক্রোবাস থেকে নেমে তিনজন প্রথমে লাঠি দিয়ে আঘাত করে চিকিৎসককে। এ সময় চালক শাহীনকে চলে যেতে বলে। শাহীন মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যেতে গিয়ে দেখেন পেছনে চিকিৎসক পড়ে আছেন। তার শরীর দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। এরপর তিনি রাস্তায় বসে পড়ে চিৎকার দিতে থাকেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায় মাইক্রোবাসে করে। পরে রাস্তার লোকজন কাজেম আলীকে ধরাধরি করে রক্তাক্ত অবস্থায় রামেক হাসপাতালে নেন। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এদিকে ডা. গোলাম কাজেম আলী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল সকালে রাজশাহীতে মানববন্ধন করা হয়েছে দেবীনগর স্টুডেন্ট কমিউনিটির ব্যানারে। সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে নিহত গ্রাম্য চিকিৎসক এরশাদ আলী দুলাল হোমিও চিকিৎসা দিতেন। রবিবার বিকালে তাকে নিজ এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। রাত ৯টার দিকে নগরীর শাহ মখদুম থানার সিটিহাট এলাকা থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শাহ মখদুম থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে স্বজনরাই দুলালকে অপহরণ করে বলে পরিবার অভিযোগ করে। অপহরণের পর চন্দ্রিমা থানায় একটি অভিযোগও করা হয়। এর ছয় ঘণ্টার মধ্যে শাহ মখদুম থানা এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি উদ্ধার করে রাতেই রামেকের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সকালে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ওসি বলেন, ‘আমাদের থানা এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার হলেও এখানে মামলা হয়নি। চন্দ্রিমা থানার অপহরণ মামলাটিই এখন হত্যা মামলায় রূপ নেবে। হত্যাকারীদের ধরতে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ কাজ করছে।’

সর্বশেষ খবর