বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বেতন বাড়ানোর দাবি

দিনভর সংঘর্ষ শ্রমিক-পুলিশ

রাজধানী ও গাজীপুরে কারখানা গাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর আগুন অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনভর সংঘর্ষ শ্রমিক-পুলিশ

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল দিনভর পোশাকশ্রমিকরা রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী গাজীপুরে তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বিক্ষুব্ধরা বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। মিরপুরে পোশাকশ্রমিক, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। গতকাল দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষের সময় ১৫টি বাস, দুটি মার্কেট, একটি ব্যাংকের শাখা ও দুটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ত্রিমুখী সংঘর্ষে কমপক্ষে ২২ জন পোশাকশ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরেও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল ব্যাপক তা ব চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পুলিশ বক্সে আগুন, মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ, পুলিশ ফাঁড়ি, কারখানা, হাসপাতাল ও শোরুম ভাঙচুরসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালায়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে মোতায়েন করা হয় বিজিবি। ঢাকার আশুলিয়ায়ও আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে অন্তত ৪০ জন শ্রমিক আহত হন।

মিরপুরের সংঘর্ষের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গার্মেন্টস শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছে। মিরপুর-১১ তে গতকাল আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাস্তায় নামে। পরে তিন পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় মিরপুরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন শ্রমিকরা। আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তারা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন। মিরপুর ১১ নম্বরে গতকাল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ?দুই পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

আমাদের কালিয়াকৈর ও গাজীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গাজীপুরে অষ্টম দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ছয়দানা, মালেকের বাড়ি, তেলিপাড়া, বোর্ড বাজার, ভোগড়া বাইপাস, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক, সফিপুর এলাকায় শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনরত শ্রমিকরা গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর, পুলিশ বক্সে ভাঙচুর, ট্রাক ও পিকআপকে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, শিল্প পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি কাজ করে। গতকাল সকাল থেকে মৌচাক, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ, চন্দ্রাসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। পরে তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্ব¦ালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। একপর্যায়ে তারা মৌচাক পুলিশ ফাঁড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করে। বেলা ১১টায় উত্তেজিত শ্রমিকরা সফিপুরে ট্রাফিক পুলিশের বক্সে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে পাশের তানহা হাসপাতাল নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গ্লাস ভাঙচুর করে। চন্দ্রা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় তারা পাশের ওয়ালটন কারখানার একটি শো-রুম ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পিকআপভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে শ্রমিকরা। এ ছাড়া দুপুর ২টায় পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় ফেব্রিক্স বহনকারী কাভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগ, মৌচাক এলাকায় অপর একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিভিন্ন স্থানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ, জেলা পুলিশের পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বিজিবিও। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান জানান, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আর পুলিশ বক্স ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, কারখানা ও যানবাহন ভাঙচুরকারীরা প্রকৃত শ্রমিক নয়।

পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, সকাল ৯টায় কয়েক শ পোশাকশ্রমিক গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগড়া এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে কয়েকটি কারখানায় হামলা চালায়। এর মধ্যে ভোগড়া বাসন সড়ক এলাকায় সাংওয়াং কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। পরে তারা আলেমা ও মিম ডিজাইনে হামলা চালাতে গেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেয়।

সাভার প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় নরসিংহপুর এলাকার শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে টিয়ারশেল ছোড়ে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এতে আহত হন ৪০ জন শ্রমিক। সকাল ৯টায় জামগড়া এলাকার পলমল গ্রুপের শ্রমিকরা বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করে কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে। এ পরিস্থিতিতে সাভার ও আশুলিয়ার অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে সাভারের হেমায়েতপুরে পদ্মারমোড় এলাকায় কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয় তাদের।

শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান গাজীপুর মেট্রো চেম্বার সভাপতির : ৪৫টি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। গতকাল চেম্বার সভাপতি গাজীপুরের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বাসায় ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানান, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা  চালিয়েছে। তাদের সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকদের কোনো সম্পর্ক নেই। একটি মহল যৌক্তিক আন্দোলন নষ্ট এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বন্ধ করে দিতে চায়। দেশকে ধ্বংস করতে চায়। আজ বুধবার থেকে মালিকপক্ষকে গাজীপুরের কল-কারখানা চালুর আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর