শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
জাতীয় সংবিধান দিবস আজ

মুদ্রিত সংবিধান যেন সোনার হরিণ

আরাফাত মুন্না

আজ ৪ নভেম্বর, জাতীয় সংবিধান দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কার্যকর হয় দেশের সংবিধান। এর পর থেকে এ পর্যন্ত সংবিধানে ১৭টি সংশোধন আনা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের এপ্রিলে ১৬ কোটির বেশি নাগরিকের জন্য মাত্র ৩ হাজার কপি সংবিধান ছাপানো হয়। ফলে তা সাধারণ মানুষ  দূরের কথা, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরও পায়নি। এরপর সাত বছর ধরে মামলা জটিলতায় ছাপা বন্ধ রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ এই দলিল। ২০১৮ সালে সংবিধানের ১৭তম সংশোধনী পাস হলেও তা কখনো মুদ্রিত আকারে প্রকাশ হয়নি। এ ছাড়া ২০১৬ সালে প্রকাশিত সংবিধানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে চিহ্নিত হওয়া শতাধিক ভুলও সংশোধন করা যায়নি এরপর আর সংবিধান ছাপা না হওয়ার কারণে। সাধারণ মানুষের কাছে মুদ্রিত সংবিধান এখন সোনার হরিণ। জানা গেছে, উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আপিল বিভাগের রায়ে বাতিল হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষে ওই রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এটি এখন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আগামী ৯ নভেম্বর রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য উঠবে। এই রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান ছাপানো হচ্ছে না বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উচ্চ আদালতে ষোড়শ সংশোধনীর রায়সংক্রান্ত রিভিউ আবেদন বিচারাধীন থাকায় নতুন করে সংবিধান ছাপা সম্ভব হচ্ছে না। রিভিউর রায় দেখে সংবিধান ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই কর্মকর্তা আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীসহ সংবিধান ছাপানো হলে আদালত অবমাননা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইভাবে ষোড়শ সংশোধনী ছাড়া সংবিধান ছাপানো হলে সংসদ থেকে শোকজ নোটিস পাঠানো হতে পারে। তাই সরকার আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। জানা গেছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয় সংসদের কাছে। পরে ওই সংশোধনী প্রথমে হাই কোর্ট বাতিল করে রায় দেন। আপিল বিভাগও হাই কোর্টের রায় বহাল রাখেন। এখন চলছে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তির প্রস্তুতি। এদিকে সরকারি উদ্যোগ ছাড়া বেসরকারি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানেরও এখতিয়ার নেই সংবিধান ছাপানোর। ফলে নাগরিকের সংবিধান চর্চা কার্যত ব্যাহত হচ্ছে। তবে ইন্টারনেটের এই যুগে সংবিধানের ডিজিটাল ভার্সন পাওয়া এখন আর কঠিন কিছু নয়। আইনের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণ চাইলেই সরকারিভাবে প্রকাশিত সংবিধানের মূল কপি সংগ্রহ করতে পারছেন না। তাদের বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে প্রকাশিত সংবিধানের কপি অতিরিক্ত টাকায় কিনতে হচ্ছে। কপিরাইট আইন অনুযায়ী সংবিধান প্রকাশের বৈধ এখতিয়ার শুধু সরকারের। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের কাছে সংবিধানের কপি পৌঁছে দেওয়া সরকারের কর্তব্য। তা যখন হচ্ছে না, তখন অন্তত সংবিধানের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যত কম দামে বিক্রির ব্যবস্থা রাখা যায় ততই ভালো। সরকারেরই এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, নাগরিকদের উচিত সংবিধান পড়ে রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য প্রতিপালন করা এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে তার যা অধিকার আছে সে সম্পর্কেও সচেতন থাকা। সংবিধান ছাপানো নিয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার চাইলেই ছাপাতে পারে। এটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।

আজ জাতীয় সংবিধান দিবস : দেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্ব¡পূর্ণ এই দিনটির দীর্ঘদিন কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছিল না। গত বছর থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দিবসটি পালন হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪ নভেম্বর পেয়েছে জাতীয় সংবিধান দিবসের স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতির অংশ হিসেবে গত বছর সময় স্বল্পতার কারণে সীমিত পরিসরে জাতীয় এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। তবে এবার ব্যাপকভাবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়। এবার ‘বঙ্গবন্ধুর ভাবনা সংবিধানের বর্ণনা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটিকে কেন্দ্র করে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আজ বিকাল ৪টায় এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন মালদ্বীপের প্রধান বিচারপতি ইউ জে আহমেদ মুথাসিম আদনান। সভাপতিত্ব করবেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

আইন মন্ত্রণালয় দিবসটিকে কেন্দ্র করে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি আজ সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সেমিনারের আয়োজন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সর্বশেষ খবর