সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাজে যোগ দিয়েছেন গার্মেন্ট কর্মীরা

গাজীপুরে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাজীপুর প্রতিনিধি

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সভা আগামীকাল বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় এই সভায় পোশাকশিল্পের মজুরি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ স্বাক্ষরিত নোটিসে বলা হয়েছে, গার্মেন্ট শিল্পে নিযুক্ত সব শ্রেণির শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বোর্ডের সব সদস্যকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হলো

এদিকে বেতন বাড়ানোর দাবিতে গত কয়েক দিনের শ্রমিক আন্দোলনের পর গতকাল ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বিভিন্ন কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আশুলিয়ার কাঠগড়া, বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুরসহ আশপাশের এলাকার সড়কের বিভিন্ন স্থানে এবং বেশ কয়েকটি কারখানার সামনে পুলিশ মোতায়েন ছিল। সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে জলকামান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেছিলেন, ‘মালিকদের ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব অযৌক্তিক। আগামীকাল মজুরি বোর্ডের পরবর্তী সভা হবে। পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গত এপ্রিলে সরকার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিক পক্ষ প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব দেয়। মালিক পক্ষের এই মজুরি প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকেরা পরদিন আন্দোলনে নামেন। প্রথমে গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবি আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা আশুলিয়া-সাভারেও ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিক আন্দোলনে দুজন শ্রমিক নিহত হন। আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে উঠলে মালিকেরা কারখানা বন্ধ করে দেয়। গত বৃহস্পতিবার মিরপুর ও গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। ওই দিন বিভিন্ন এলাকায় ৬৫০টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে মিরপুরের ২৩৫টি, আশুলিয়ার ৩৫টি ও গাজীপুরের ৩৮৬টি কারখানা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শ্রমিকেরা কাজ না করলে এবং ভাঙচুর হলে ৪ নভেম্বর থেকে ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় বিজিএমইএ। গতকাল সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ শান্ত রয়েছে।

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, সাভার ও আশুলিয়ার আতঙ্ক নিয়ে শিল্প কারখানা খুলেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল থেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দিতে দেখা যায় শ্রমিকদের। এর মাধ্যমে ৮ দিন পর রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। আশুলিয়া বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। এনভয় পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মর্কতা করিব হোসেন বলেন, সকাল থেকে যথারীতি কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকেরাও শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনো ঝামেলার খবর পাওয়া যায়নি।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, শ্রমিক আন্দোলন পুঁজি করে কোনো ধরনের নাশকতা-সহিংসতা করে পোশাক শিল্প নষ্ট করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে র‌্যাব। তিনি আরও বলেন, এই শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল বা দুষ্কৃতকারীরা উঠে পড়ে লেগেছে।

গাজীপুরে সকালে যোগ দিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ : গাজীপুরের বেশির ভাগ কারখানার শ্রমিকরা গতকাল সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে দুপুরের পর কাশিমপুর ও কোনাবাড়ির কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বের হয়ে আর কাজে যোগ দেয়নি। জেলার অন্যান্য এলাকায় শিল্প কারখানায় স্বাভাবিকভাবে কাজ চলেছে।

গাজীপুরের কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ রাফিউল করিম জানান, কাশিমপুরের মোল্লা মার্কেট এলাকার মিতালী ফ্যাশন লিমিটেড, হাতিমারা এলাকার কটন ক্লাব নিটওয়্যার ও জিতার মোড় এলাকার কাইজার গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে কারখানায় যান। দুপুরে খাবারের বিরতির পর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর ও জরুন এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে হঠাৎ বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যোগ দেন। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে শান্ত করে। পরে তারা এলাকা ত্যাগ করেন।

সর্বশেষ খবর