জয়ের জন্য ২ রান দরকার। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের প্রথম বলটিকে গ্ল্যান্স করেন তানজিম সাকিব। বল ব্যাটে না লাগলেও উইকেটরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে সীমানার দড়ি পাড় হয়। বাউন্ডারি হতেই নন স্ট্রাইক এন্ডে দাঁড়ানো তৌহিদ হৃদয় ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন। ড্রেসিং রুমের ক্রিকেটাররা একে অপরের সঙ্গে হাত মেলান। অথচ মাঠে হাত মেলাননি শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা। হৃদয়ের অভিব্যক্তিতেই স্পষ্ট ফুটে ওঠে টাইগারদের বুক থেকে আকাশসমান চাপ নেমে গেছে। ওই বাউন্ডারিতেই টানা ৬ হারের ধাক্কা সামলে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় জয় পায় বাংলাদেশ। টানা হারে পাহাড়চাপা পড়েছিলেন সাকিব, শান্তরা। তার ওপর গতকাল নতুন করে যোগ হয়েছিল বিতর্কিত ‘টাইমড আউট’। দূষণ নগরী দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সবকিছুকে কফিনবন্দি করে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলেছে টাইগাররা। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন নাজমুল শান্ত ও সাকিব আল হাসান। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে দুজনে ১৬৯ রানের জুটি গড়েন। দুজনের গড়ে দেওয়া জুটিতে ৩ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয় পায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে এর আগে কখনই শ্রীলঙ্কাকে হারায়নি টাইগাররা। ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ সালে হেরেছিল। ২০১৯ সালে ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। এবারই প্রথম জিতল। সেটা আবার ৫৩ বল হাতে রেখে। অবিস্মরণীয় এই জয়ে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ। পয়েন্ট টেবিলের সাতে উঠল। ঘটনাবহুল এক ম্যাচ উপভোগ করল বিশ্বকাপ ক্রিকেট। চিরস্থায়ী সাক্ষী হল অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম। রাজধানী দিল্লির দূষণকে কফিনচাপা দিয়ে গতকাল সব আলো কেড়ে নিয়েছিল ‘টাইমড আউট’। সব আলো টেনে নিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও সাকিব। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ‘টাইমড আউট’ হয়েছেন ম্যাথুস। ইতিহাসের পাতায় আলাদাভাবে জায়গা নিয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ। এতদিন দিল্লির দূষণ ছিল ম্যাচের মূল আলোচ্য বিষয়। কিন্তু ২৫তম ওভারের ‘টাইমড আউট’-এর ‘চার মিনিট’ ম্যাচের ফোকাস আলাদাভাবে টেনে নেয়। টার্গেট ২৮০ রান। আকাশসমান টার্গেট নয়। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে এর আগে ৪২৮, ৩৯৯ রান উঠেছে। ওভারপ্রতি স্ট্রাইক রেট ৫.৬ রান আকাশছোঁয়া নয়। সেই টার্গেটে খেলতে নামেন দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও লিটন দাস। পুনরায় ব্যর্থ হন তানজিদ। দলীয় তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে সাজঘরে ফেরেন বাঁ-হাতি ওপেনার। ৫ বলে দুই চারে ৯ রান করেন। বিশ্বকাপের ৮ ম্যাচে তার রান ১০৯। লিটনও বেশি সময় টিকে ছিলেন না। ২২ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ২৩ রান করে আউট হন ডান হাতি ওপেনার। অবশ্য টানা দুই ছক্কা মারেন পায়ে টান নিয়ে। ৪১ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ২৪.৫ ওভারে ১৬৯ রানের জুটি বাঁধেন নাজমুল শান্ত ও সাকিব। সাকিব শুরুতে জীবন পান। জীবন পেয়ে নতুন করে হাল ধরেন ম্যাচের। শুধু হাল ধরেননি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিকে থাকার বাংলাদেশের শেষ সুযোগটিকে কাজে লাগান। বিশেষ করে শান্ত ছিলেন অসাধারণ। আফগানিস্তান ম্যাচে ৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পরের ৬ ম্যাচে দুই অঙ্কের কোনো স্কোর করেননি। ছয় ম্যাচে তার রান ছিল ২৮। গতকাল সব ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে খেলেন ৯০ রানের ইনিংস। ১০১ বলের ইনিংসটিতে ছিল ১২টি চার। টানা ব্যর্থতার পর গতকাল দারুণ ব্যাটিং করেন সাকিব। ম্যাথুসের স্লোয়ারে আউট হওয়ার আগে ৬৫ বলে ৮২ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেন টাইগার অধিনায়ক। ৭ রানে জীবন পাওয়া টাইগার অধিনায়কের ইনিংসে ছিল ১২টি চার ও ২টি ছক্কা। চলতি বিশ্বকাপে এটাই তার প্রথম হাফসেঞ্চুরি।
বাজে উইকেটের জন্য ২০০৯ সালে এখানে বাতিল হয়েছিল ভারত-শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে। দুই দলের টেস্ট ম্যাচে দূষণের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার কয়েকজন ক্রিকেটার। দূষণের নগরী দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম গতকাল পুনরায় ইতিহাসের ব্রাকেটবন্দি হয়েছে। ইতিহাসবন্দি হওয়ার নায়ক, খলনায়ক ম্যাথুস ও সাকিব। ঘটনাটি শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ২৫ নম্বর ওভারের দ্বিতীয় বলে। সাকিবের ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সামারাবিক্রমা। ক্রিজে আসেন ম্যাথুস। টাইগার অধিনায়কের তৃতীয় বল খেলার জন্য প্রস্তুতও হন। কিন্তু হঠাৎ করে হেলমেটের স্ট্র্যাপ খুলে যাওয়ায় বিরতি নেন ব্যাটিংয়ে। ততক্ষণে সময় ২ মিনিট পেরিয়ে যায়। নিয়মের চেয়ে বেশি সময় নেওয়ায় আউটের আবেদন করেন সাকিব। ক্রিকেটের নিয়মের ২৬.১ ধারা অনুযায়ী ওয়ানডে ক্রিকেটে একজন ব্যাটার আউট কিংবা রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ ২ মিনিট সময় নিতে পারবেন পরের বল খেলার। ম্যাথুস সময় নেন প্রায় ৪ মিনিট। নিয়ম অনুযায়ী টাইগার অধিনায়ক এটা মেনে নেননি। আউটের আবেদন করেন। আম্পায়ার এরাসমুস আউট দেন। ম্যাথুস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম আউট হলেও এমন ঘটনা ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে রয়েছে ৫টি। ম্যাথুসের ঘটনাবহুল আউটের ম্যাচে ১০৮ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন চারিথ আশালঙ্কা। ইনিংসটি খেলেন ১০৫ বলে ৬ চার ও ৫ ছক্কায়।