মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতারা কারাগারের বিশেষ সেলে

আমান মজনু বিএসএমএমইউ হাসপাতালে

সাখাওয়াত কাওসার

বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চম্পাকলি সেলে অবস্থান করছেন। এই ডিভিশন সেলের দ্বিতীয় তলায় রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নিচ তলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। চতুর্থ তলায় রাখা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে। তবে গত ১০ অক্টোবর গ্রেফতারের পর বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে রাখা হয়েছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ডিভিশন সেলে। কারা কর্তৃপক্ষ বলছেন, গ্রেফতার এসব শীর্ষ নেতাকে কারাবিধি অনুযায়ী সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যদিও মির্জা আব্বাসকে কারাগারে পাঠানোর পর সাধারণ সেলে এবং জরুরি ওষুধ সরবরাহ না করার অভিযোগ করেছে বিএনপি। কারা সূত্র বলছে, ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন হলেও গতকাল পর্যন্ত বন্দির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৪৪৯ জন। তবে কয়েক মাস ধরে সরকার পতনের এক দাবিতে অনড় থাকা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের অনেক শীর্ষ নেতাই এখন কারাবন্দি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেবল ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আগে ও পরে গতকাল পর্যন্ত মোট গ্রেফতারের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৫৯ জন। মামলার সংখ্যা ১৩২টি। কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সোমবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা ৮৭ হাজার ৪৪৯ জন। বন্দিদের সঙ্গে কারাবিধি অনুসারে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে গত রবিবার আদালত খোলা থাকার কারণে অনেকের জামিন হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৬৮ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। সেই হিসাবে ৮০-৯০ হাজার পর্যন্ত বন্দি থাকলে সেটিকে স্বাভাবিক বন্দির ধারণক্ষমতা হিসেবে মনে করে কারা কর্তৃপক্ষ। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে একটি মহিলা কারাগার উদ্বোধন করা হলেও তা এখনো জনবলের কারণে চালু হয়নি। তবে নারী বন্দিদের বর্তমানে কাশিমপুরে মহিলা কারাগারে রাখা হচ্ছে।

এদিকে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রাজধানীর রমনা মডেল থানায় করা মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। গতকাল দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন তার জামিন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর বাইরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি মিছিল থেকে সূত্রাপুর থানাধীন ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি তারেক আহমেদ জনি, সাধারণ সম্পাদক হাসান প্রদীপ, ৪২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুদ আফসার ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা রবিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর উত্তরের আদাবর থানার ১০০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আজগর আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনম সাইফুল ইসলামকে গত রবিবার দিবাগত রাতে দোলাইপাড়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার ম্যানেজার, বাড়ির দারোয়ান ও কাজের ছেলেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জানা গেছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত দেশের মোট ৬৮টি কারাগারে বন্দি ছিল ৮৭ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে ছিল ১১ হাজার ৫৪। বর্তমানে কারাবন্দি নেতাদের মধ্যে ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু অসুস্থ থাকায় কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রিজন সেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর বাইরে কারাগারে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম, দীর্ঘদিন ধরেই কারাগারে বন্দি রয়েছেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, জুরাইনের কাউন্সিলর মীর হোসেন মীরু এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বেশ কিছু বন্দি। এদিকে, মির্জা আব্বাসের সঙ্গে অসদারণের বিষয়ে বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উনি সম্মানিত মানুষ। আমি নিজে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের সেল পরিদর্শন করেছি। সেখানে থাকা সবাই ভালো আছেন। কারাবিধি অনুযায়ী তাদের সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ২৯ অক্টোবর গ্রেফতারের পর কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তখন থেকেই তিনি চম্পাকলিতে আছেন। বিশেষ সেই সেলের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে অবস্থান করছেন তিনি। তাকে সব ধরনের ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।

গতকাল দুপুরে ডিএমপি থেকে পাঠানো বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ এবং পরবর্তী সময়ে হরতাল-অবরোধে নাশকতার অভিযোগ এবং পুলিশ হত্যা এবং হামলা-মামলায় গতকাল পর্যন্ত ১০২টি মামলা করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৪ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় আটটি ক্রাইম ডিভিশনে ১৩টি মামলা হয়েছে। এ সময় গ্রেফতার হয়েছে ৫২ জন।

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রবিবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার হয়েছেন ২৭৫ জনের অধিক নেতা-কর্মী। ওই সময়ের মধ্যে মামলা হয়েছে মোট ১০টি। আসামি করা হয়েছে ৯৯৫ জন নেতা-কর্মীকে। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের কারা অভ্যন্তরেও নানা হয়রানি করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর