বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনমুখী আওয়ামী লীগ

ইশতেহার তৈরি শেষ পর্যায়ে প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত, সিলেট থেকে প্রচার শুরু শেখ হাসিনার

রফিকুল ইসলাম রনি

নির্বাচনমুখী আওয়ামী লীগ

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। অতীতের মতো তরুণ প্রজন্মের ভোট টানতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ শিরোনামে নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্বাচন উপকমিটি গঠনসহ নানা সিদ্ধান্ত নিতে আজ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও এগিয়ে এনেছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে ইতোমধ্যে নির্বাচনি জনসভায় নেমেছেন তিনি। শনিবার রাজধানীতে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করেছেন। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার আগে কক্সবাজার, নরসিংদী ও খুলনায় জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এসব জায়গায় মেগা প্রকল্প উদ্বোধন শেষে নৌকায় ভোট চাইবেন টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচন পর্যন্ত যেন বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে না পারে, সেজন্য দলীয় নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবেন। তফসিল ঘোষণার পর সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার ও শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনি জনসভা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আট বিভাগের কমপক্ষে ২০ জেলায় তিনি নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য দিতে পারেন।

জানা গেছে, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করবে। এবার মনোনয়নপত্রের দাম বাড়ছে। আগে ৩০ হাজার টাকায় সংসদীয় আসনের মনোনয়নপত্র বিক্রি হতো। এবার তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচনমুখী। বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস-নাশকতা করে জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। আমরা নির্বাচনি ট্রেনে যাত্রা করেছি। নির্বাচন যথাসময়ে হবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আটটি বুথে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা ও জমা দেওয়া যাবে। এবার মনোনয়নপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা। কেউ অনলাইনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে চাইলে তা পারবেন। তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট থেকে নির্বাচনি জনসভা শুরু করবেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে দলীয় প্রধান নির্বাচনি এলাকার প্রার্থী বাছাই করছেন। বিএনপির প্রার্থী দেখে আওয়ামী লীগ প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারে বলে জানা গেছে। জনসভা, ইশতেহার প্রণয়ন, উন্নয়ন প্রচার, কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন, কর্মী-জনসভাসহ নির্বাচনি সব কাজও এগিয়ে নিচ্ছে দলটি। একাধিক বৈঠকে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছেন দলপ্রধান শেখ হাসিনা। এবার যে দলীয় মনোনয়ন কঠিন হবে, তা তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন।

নির্বাচনি প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ নেত্রী গুছিয়ে এনেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব নিকটে। আমরা পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছি। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভাগীয় সমাবেশ করছেন। তফসিল ঘোষণার আগে তিনি তিনটি জেলায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলা-উপজেলায় জনসভা, কর্মিসভা, বর্ধিত সভায় অংশ নেবেন।

বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ পরিচালনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা দলের নেতা-কর্মীদের বলেছেন, আগামী নির্বাচন কঠিন হবে। সে নির্বাচনে সব দিক বিবেচনা করে যোগ্যদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। রাজধানীতে দুটি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কথা বলেছেন। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন তিনি।

জানা গেছে, নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার আগে ১১ নভেম্বর কক্সবাজার, ১২ নভেম্বর নরসিংদী এবং ১৩ নভেম্বর খুলনায় জনসভা করবেন শেখ হাসিনা। কক্সবাজারে ট্রেন, নরসিংদীতে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর সারকারখানা, খুলনা ট্রেন চলাচলসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে নৌকা মার্কায় ভোট চাইবেন তিনি। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, আগামী নির্বাচনেও তারা ১৪-দলীয় জোটগতভাবে অংশ নেবে। এর বাইরে ছোট-বড় অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচনি মাঠে রাখতে তাদের সঙ্গে গভীর যোগাযোগও রাখছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংবিধান মেনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেউ যদি এতে অংশগ্রহণ না করে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমরা যথাসময়েই এবং সংবিধান মেনে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারে রেখেই নির্বাচন করব। কারও জন্য নির্বাচনি ট্রেন অপেক্ষা করবে না।’ কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলা করে মাঠ দখলে রাখার জন্য দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিট পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেতারা বলেছেন, নির্বাচনি ইশতেহারকে অংশগ্রহণমূলক ও আকর্ষণীয় করতে এবার প্রথমবারের মতো তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পরপরই ৩০০ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দলটি। এরপর জাতির উদ্দেশে ইশতেহার প্রকাশ করবে আওযামী লীগ। দলীয় এক সূত্র জানান, এবার নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে, সেই চিন্তা মাথায় রেখে দলের হাইকমান্ড ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য দলের কেন্দ্র গঠিত একাধিক কমিটি স্থানীয় পর্যায়ে বর্তমান এমপি ও নতুন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে সম্প্রতি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সে অনুযায়ী তিনি সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

দলীয় সূত্র আরও জানান, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্য থেকে প্রায় ৯০ জনের বিষয়ে নানান অভিযোগ থাকায় তারা মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এসব আসনে নতুন মুখ আসতে পারে।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, আগামী মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে।

সর্বশেষ খবর