বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত : মেজর হাফিজ

বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত : মেজর হাফিজ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির ওপর জোর না দিয়ে বিএনপির আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত বলে  মন্তব্য করেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে জোর না দিয়ে বিকল্প সমাধান খোঁজা উচিত। বিএনপি যদি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়। বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র- এসব পরাশক্তির কাছে বাংলাদেশ সরকার কিছুই নয়। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রের খাতিরে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের সহায়তা নিয়ে বা মধ্যস্থতা পেলে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। গতকাল ঢাকার বনানীতে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর হাফিজ এসব কথা বলেন। মেজর হাফিজ বিএনপি ছেড়ে নতুন দল গঠন করছেন, যখন এই আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে, ঠিক সে সময় এই সংবাদ সম্মেলন করলেন তিনি। হাফিজ উদ্দিন বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বিএনপিতে সত্যি কথা বলার মতো লোক, বিশেষ করে দলের চেয়ারপারসনের সামনে সত্যি কথা বলার মতো লোক আমার চোখে পড়েনি। অনেক আগে সাইফুর রহমান সাহেব বলতেন। তিনি বিএনপির একজন ত্যাগী নেতা। তাকে দুই-চারবার সত্যি কথা বলতে দেখেছি। এছাড়া কোনো নেতা ‘ইয়েস স্যার, রাইট স্যার’ বলা ছাড়া আর কোনো কিছু জানেন না। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমাদের (বিএনপি) অংশগ্রহণ করা উচিত ছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) আহ্বান জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় দেওয়ার জন্য। কারণ, তখন আওয়ামী লীগের অত্যন্ত লেজেগোবরে অবস্থা ছিল। কখন এ ধরনের আহ্বান জানায়? যখন অবস্থা লেজেগোবরে থাকে। এখন কি এমন আহ্বান জানায়? কিন্তু আমরা তখন সেই অবস্থার ফায়দা নিতে পারিনি। এর ফলে আমরা সেই যে রাজপথে গিয়েছি এখনো সেখানেই আছি। হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, আগামী যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমার পক্ষে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। আমি আমার নির্বাচনি এলাকার জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে নিজের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার চেষ্টা করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিতে আছি। এই দলের রাজনীতি থেকেই বিদায় নিতে চাই। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি এই দল থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, বিএনপির এই নির্বাচনে যাওয়া উচিত। দলটিতে অসংখ্য ত্যাগী নেতা-কর্মী রয়েছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, বিএনপি ভোটে অংশ না নিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, একইভাবে জাতীয় নির্বাচনও হয়ে যাবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমঝোতার পথ বের করতে মেজর হাফিজ প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। মেজর হাফিজ মনে করেন, কেবল রাজপথে স্লোগান দিলেই সরকার পতন হবে না। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক খুবই দুর্বল, কীভাবে আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া যায় সেই চিন্তা করা উচিত। এদিকে বিএনপির নেতা মেজর হাফিজের নেতৃত্বে নতুন দল হচ্ছে বলে গত সোমবার বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের ফলে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্দেশে মেজর হাফিজ বলেন, দল সংস্কার করুন। এভাবে রাজনৈতিক দল চলে না। মেজর হাফিজ বিএনপির কিছু কর্মকান্ডের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শ ভুলে যাওয়ার কারণে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। আট বছর ধরে কাউন্সিল হয়নি এবং নতুন নেতা নির্বাচন করা যায়নি। বিএনপিতে নিজের অবস্থান তুলে ধরে মেজর হাফিজ বলেন, ‘তিন বছর আগে ২০২০ সালে আমার বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমি এর লিখিত জবাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তিন বছরে আমার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য কি না, তা জানানো হয়নি। হয়তো আমার বক্তব্য গ্রহণ করেছে, তাই বহিষ্কার করেনি। শোকজের তিন বছর পার হলেও কী হয়েছে, জানি না।’ আরও বলেন, ‘৩১ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে আছি। অনেক ষড়যন্ত্র, ভুল বোঝাবুঝি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া যত দিন সুস্থ ছিলেন, কোনো সমস্যা ছিল না।’ নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মেজর হাফিজ বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি। চিকিৎসার জন্য আবার দেশের বাইরে যাব। শারীরিক অসুস্থতার জন্য রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি, রাজনীতি থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি।’

 

সর্বশেষ খবর