বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানুষ আন্দোলনে নেমেছে, গণতন্ত্র অর্জন করবই

শফিউল আলম দোলন

মানুষ আন্দোলনে নেমেছে, গণতন্ত্র অর্জন করবই

ড. মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, দেশে হঠাৎ করে আজ যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটা এ সরকারের সৃষ্টি। সরকার ভাবছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে নির্বাচনি তফসিলের ঘোষণা দিয়ে কাবু করে ফেলবে। আসলে এটা তাদের দুরাশামাত্র। মানুষ গণতন্ত্রের আন্দোলনে নেমেছে। আমরা এ গণ আন্দোলন অব্যাহত রাখব। জনগণের দাবি ও গণতন্ত্র আমরা অর্জন করবই। সরকারের সকল প্রকার পরিকল্পনা ইতোমধ্যে ব্যর্থ হয়ে গেছে। বিএনপির তৃতীয় দফা টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে (ভার্চুয়ালি) আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। মঈন খান বলেন, আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধী দলকে চাপে রেখে তফসিল ঘোষণা এমনকি তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের উদাহরণও অনেক দেখেছি। শুধু তাই নয়, তফসিল ঘোষণার পর যে নির্বাচন হওয়ার কথা তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়েছে, সে উদাহরণও আমরা দেখেছি। কাজেই তফসিল ঘোষণার হুমকি দিয়ে বিরোধী দলকে দূরে রেখে দেশের মানুষকে কাবু করা সম্ভব নয়। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আজ দেশের মানুষ নিজের ইচ্ছায়, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। সরকার তাদের আন্দোলনে নেমে আসতে বাধ্য করেছে। আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে গিয়েছি এবং আগামীতেও চালিয়ে যাব। বিরোধী দলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়তো কিছু মানুষকে তারা বন্দি করতে পারবে, জেলে নিতে পারবে, হয়তো তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএনপির লাখ লাখ সদস্য ও কর্মীকে ঘরছাড়া করতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশের জনসাধারণ, যারা আজ জেগে উঠেছে, তাদের এ সরকার কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারবে না। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জয় হবেই।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের এ পরিস্থিতি আপনাদেরই সৃষ্টি। তাই আপনাদের (সরকারকে) অনুরোধ করব এই হিংসাত্মক মারাত্মক পথ থেকে সরে আসুন। একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ আপনারা নিজেরাই খুলে দিন। এটা শুধু আপনাদের জন্যই মঙ্গল হবে না, দেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে। এ দেশের মানুষের ভোটের যে অধিকার, তাদের যে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার সেটা যেন তারা ফিরে পায়। যদি এই শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়, আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করবে। তখন আমি সর্বপ্রথম তাদের অভিনন্দন জানাব। কাজেই আপনাদের তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, এ সরকার তো দাবি করছে উন্নয়ন করছে, তাহলে দেশের মানুষকে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মুখোমুখি করতে তাদের এত ভয় কেন? একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে এগিয়ে আসার জন্য তিনি সরকারকে পুনরায় অনুরোধ জানান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে সারা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। প্রথমে বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে পরে জেলা ও উপজেলায়। এমনকি একই দিনে প্রায় ৬ হাজার ইউনিয়নে কর্মসূচি পালন করেছি। পদযাত্রা করেছি, সভা-সমাবেশ করেছি। শান্তিপূর্ণ রোডমার্চ করেছি। লাখ লাখ মানুষ একেকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে দেখলে দেশের কোটি কোটি মানুষ আমাদের দাবির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। দাবিটি হচ্ছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। যে গণতন্ত্রের জন্য একদিন এই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আমরা কী দেখলাম ২৮ অক্টোবর? হঠাৎ করেই দেশের রাজনীতির দৃশ্যপট বদলে দেওয়া হলো। আমাদের একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার পরিকল্পিতভাবে হামলা করল। তারপর শুরু হলো টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, গুলি, লাঠিচার্জ এবং বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ। সরকার ভেবেছিল এ ধরনের ভয়ভীতি-সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধী দলকে স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু চলমান কর্মসূচিতে দেশের মানুষ থেমে নেই। বিএনপির যারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতা তাদের রাতের আঁধারে গ্রেফতার করা হয়েছে। একটা সভ্য দেশে এটা কি হতে পারে? তাদের মিথ্যা গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে সেসবের রহস্য সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও, স্থিরচিত্র ও বিভিন্ন কথোপকথনের রেকর্ডের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট উসকানির মাধ্যমে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এই অশান্তকর পরিবেশের দায়দায়িত্ব বিরোধী দল তথা বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেবে সরকার, এটা হতে পারে না। দেশের জনসাধারণের কাছে আজ সবকিছু পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাদের এ পরিকল্পনা সব ব্যর্থ হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর