শিরোনাম
শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফের রাস্তায় গার্মেন্ট শ্রমিকরা

গাজীপুর আশুলিয়ায় বিক্ষোভ সংঘর্ষ আহত ২৫ - কারখানার নিরাপত্তায় ৪৪ প্লাটুন বিজিবি

গাজীপুর ও সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি

ফের রাস্তায় গার্মেন্ট শ্রমিকরা

গাজীপুরে গতকাল শ্রমিক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাজীপুর ও ঢাকা জেলার সাভারের আশুলিয়ায় ফের বিক্ষোভ করেছে গার্মেন্টকর্মীরা। এ সময় তারা রাস্তা অবরোধ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। আশুলিয়ায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছেন ২৫ জন। গাজীপুরে অর্ধশতাধিক এবং আশুলিয়ায় শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। পোশাক কারখানার নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। গাজীপুরে ন্যূনতম বেতনভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গতকালও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্পকারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে এ দিন অর্ধশতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার মজুরি বোর্ডের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সকালে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার হাসান তানভীর ফ্যাশন ও লিবাস নিটওয়্যার গার্মেন্টসহ আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা কারখানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় তাদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দেয়। তারা ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে টায়ার ও কাঠ-বাঁশ জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। প্রায় একই সময়ে মহানগরীর বাসন থানাধীন নাওজোর এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। তারা আগুন জ্বালিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। তারা ভাঙা ব্রিজ এলাকায় বিভিন্ন কারখানায় ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে অন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মহানগরীর কাশিমপুর, জরুন, হাতিমারা ও কোনাবাড়িসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা দিনভর কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। তারা কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পুলিশ মহাসড়কের ওপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। দুপুরের খাবারের বিরতির পর কোনাবাড়ীর তুষুকা গার্মেন্টসহ আরও বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বেশ কিছু শ্রমিক মহাসড়ক-সংলগ্ন তুষুকা গার্মেন্টে ঢুকে পড়ে। তারা ওই কারখানায় হামলা চালিয়ে বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা পিছু হটে পালিয়ে যায়। এদিকে দুপুর ২টার দিকে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের সাঁজোয়াযানে করে মাইকে সতর্ক করে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র‌্যাবের গাড়িবহরও টহল দেয় এলাকাজুড়ে।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ সন্ধ্যায় কোনাবাড়ী এলাকায় সাংবাদিকদের জানান, পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের নামে নাশকতা করার অভিযোগে আমরা এ পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছি। তিনি আরও জানান, একটি কুচক্রী মহল শ্রমিক আন্দোলনের আড়ালে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি। গত কয়েক দিনের শ্রমিক আন্দোলনের জেরে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী, জরুন, চান্দনা ও ভোগড়া এলাকায় অর্ধশতাধিক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈনুল হক জানান, গত ২৩ অক্টোবর থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকরা। এর প্রেক্ষিতে ৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় তারা মজুরি বোর্ডের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে পরদিন থেকে ফের আন্দোলনে নামে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। একাধিক স্থানে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও শর্টগানের গুলি ছুড়েছে। এ ছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বিভিন্ন কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সাভার : বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় বেতন বাড়ানোর দাবিতে রাস্তা বন্ধ করে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় আহত হন এক পুলিশ ও দুই সাংবাদিকসহ ২৫ জন। আহতদের আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক দিনের শ্রমিক আন্দোলনের জেরে আশুলিয়ার জামগড়া, ঘোষবাগ, কুন্ডলবাগ, নিশ্চিন্তপুর, ইউনিক, বেরুন, এলাকায় ১০০টির বেশি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।  নিশ্চিন্তপুর এলাকায় গতকাল সকাল ১১টার দিকে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে শিল্প ও সাভার মডেল ও আশুলিয়া থানা পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর কিছু সময় পর ঘোষবাগ এলাকায় শ্রমিকরা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। শ্রমিকরা মহাসড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে তখন পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ খবর