বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
জাতিসংঘ হাইকমিশনারের চিঠির জবাবে বাংলাদেশ

আইনের শাসন শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের চিঠির জবাব দিয়েছে সরকার। জবাবে বলা হয়েছে, যাচাইবাছাই ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে লেখা চিঠিতে সঠিক তথ্য উঠে আসেনি। নিরপেক্ষ উৎস থেকে পাওয়া সহিংসতার ভয়ংকর চিত্র এবং ভিডিও ফুটেজগুলো বিবেচনা করা হয়নি।  সেই সঙ্গে বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত, আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারকে দেওয়া জবাবে। ভলকার তুর্ক ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

ভলকার তুর্কের কাছে পাঠানো বাংলাদেশ সরকারের চিঠিতে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত তথ্য সন্নিবেশ ও কোনো প্রকার যাচাইবাছাই ছাড়াই আপনার চিঠিটি তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে। একইভাবে আপনার অফিস থেকে তড়িঘড়ি করে একটি প্রেস নোটও প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে নিরপেক্ষ উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান এবং সহিংসতার ভয়ংকর চিত্র এবং ভিডিও ফুটেজগুলো বিবেচনা করা হয়নি। সংবিধানের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আস্থা ও সম্মান রেখে, সরকার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ, প্রতিবাদ, মিছিল ইত্যাদির আয়োজন করার অনুমতি দিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ঘোষিত কর্মসূচিতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা এবং সরকারকে চাপে ফেলতে কৌশল হিসেবে রাজধানী ঢাকাকে বাংলাদেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও একই দিনে গত বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকার সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। সরকারের জবাবে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৮-২৯ অক্টোবরের সমাবেশ এবং ধর্মঘটের সময় বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা তাদের নেতাদের প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ, রাস্তায় সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য ধরনের সহিংস কার্যকলাপের আশ্রয় নেয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি থানা, সিসিটিভি ক্যামেরা, বিচার বিভাগ, মিডিয়া কর্মী, নিরীহ নাগরিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন এবং সরকারি সম্পত্তি। তারা পুলিশের একজন সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে, তাদের আক্রমণে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন, জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় একজন বাস কন্ডাক্টরকে, তারা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের বাসভবনে হামলা চালায়। এ ছাড়াও পরের দিনগুলোতে বিএনপি সারা বাংলাদেশে অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসের প্রচারণা ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু লোক নিহত হয়। বিএনপি দায়িত্বরত মিডিয়াকর্মীদের ওপরও সহিংস আক্রমণ চালিয়েছে। সরকারের জবাবে বলা হয়েছে, ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর প্রত্যেকটি গ্রেফতারই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়েছে। কোনোভাবেই নির্বিচারে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি এবং আমরা তাদের দেশি আইনের অধীনে অনুমোদিত সম্পূর্ণ আইনি আশ্রয়ে প্রবেশের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করছি। বিএনপি চেয়ারপারসন প্রসঙ্গে সরকারের জবাবে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া দুটি আদালতের মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত এবং ২০০৭-০৮ তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের সময় দায়ের করা আরও কয়েকটি মামলা তার বিরুদ্ধে চলছে। তবে তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী আইনি বিধানে তাঁর সাজা স্থগিত করেছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে (ক) বাংলাদেশে চিকিৎসা নেওয়া এবং (খ) দেশত্যাগ না করার শর্তে ছয় মাসের জন্য মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে ২৫ মার্চ ২০২০-এ যে শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল যেহেতু সেগুলো মেনে নিয়েছিলেন এবং তাঁর মুক্তির মেয়াদ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে। তিনি তাঁর পছন্দ অনুযায়ী বাংলাদেশের অন্যতম সেরা হাসপাতাল এভারকেয়ার হাসপাতালে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসক আনার জন্য তাঁর পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপির নেতৃত্ব সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছেন। সরকার তারও অনুমতি দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর