বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

১৭ দিন পর বিএনপি কার্যালয় ব্যারিকেডমুক্ত

পুলিশ তালা দেয়নি : কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা ১৭ দিন পর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দুই পাশে রাখা লোহার ব্যারিকেড সরিয়ে নিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে থেকেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে পুলিশের অবস্থান। তবে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখনো তালাবদ্ধ। যদিও পুলিশ বলছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ তালা দেয়নি। গতকাল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অবরোধে নাশকতায় আহতদের দেখতে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশ তালা দেয়নি, নিজেরাই তালা মেরে রেখেছে এবং তারা এখন সেখানে আসেন না। কেন আসেন না- সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। পুলিশ সেখানে থাকে নিরাপত্তার জন্য। মাসের ৩০ দিনই সেখানে পুলিশ প্রহরায় থাকে, একইভাবে এখনো সেখানে পুলিশ আছে। তিনি আরও বলেন, তারা (বিএনপি নেতা-কর্মীরা) যদি এখানে আসে, অফিস খুলে কার্যক্রম চালায়- আমাদের কোনো আপত্তি নেই বা কখনো ছিলও না।

এদিকে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সরেজমিন দেখা যায়, কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ভিক্টরি হোটেলের গলিতে এবং শ্রিংলা ইন রেস্টুরেন্টের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশের কলাপসিবল গেট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। ভিতরে চেয়ারে পড়ে আছে নির্বাচন কমিশনের চিঠিসহ বেশ কয়েকটি খাম। তবে সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও আসেননি কোনো নেতা-কর্মী। এমনকি নিরাপত্তাকর্মী বা অফিসের কর্মচারীরাও আসেননি। সড়কে রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসের চলাচল বেড়েছে। আশপাশের মার্কেট ও দোকানপাট চালু রয়েছে। তবে সকালে কার্যালয়ের নিচতলায় বইয়ের দোকান থেকে ডিবি পুলিশ একজনকে আটক করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, অবরোধ কর্মসূচিতে নৃশংসভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। নাঈম নামে একজন পরিবহন শ্রমিককে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। আহতরা অনেকে মৃত্যুশয্যায়।

এখানে যেসব পরিবহন শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চিন্তা করেছি, আমরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি।

যারা নৃশংসতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সব প্রক্রিয়া চলমান উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ইতোমধ্যে আগুন দেওয়ার সময় আমরা হাতেনাতে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছি। এ ছাড়া অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব কর্মকান্ডে জড়িতরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবরোধ এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশ দিনরাত রাস্তায় থেকে কাজ করে যাচ্ছে। মালিক-শ্রমিকরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। পুলিশ যথাযথভাবে কাজ করছে। এরপরও যে হামলাগুলো হচ্ছে, এগুলো একান্তই চোরাগোপ্তা হামলা। শ্রমিকদের ঘুমন্ত অবস্থায় বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে, এসবের জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

সোমবার খিলক্ষেত এলাকায় পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে, এরপর বলা যাবে কেন হামলা করা হয়েছে। অন্য প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি, যেসব স্থান থেকে বাসে যাত্রী ওঠে এবং নামে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশসহ ড্রাইভার-হেলপাররা যাত্রীদের ছবি তুলে রাখছেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন চেকপোস্টে বাস থামিয়ে বাসের ভিতরে পরীক্ষা করা হচ্ছে। গাড়ি যেন যত্রতত্র ফেলে না রাখে, ড্রাইভারদের আরও সচেতন হতে বলা হয়েছে। এসব হামলা প্রতিরোধে আমাদের পুলিশের সব ইউনিট কাজ করছে।’ সামনে তফসিল ঘিরে পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা দেখেছি, এর আগে অনেক আন্দোলন-হরতালের নামে সহিংসতা করা হয়েছে। যে ধরনের সমস্যাই আসুক, যে আন্দোলনই আসুক; এসব মোকাবিলা করার সক্ষমতা পুলিশের আছে।’

সর্বশেষ খবর