বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল বাম দলের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীতে গতকাল রাতে মশাল মিছিল করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি। একই সময়ে তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। তবে অধিকাংশ বাম রাজনৈতিক দল ও জোট তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। তফসিলের প্রতিবাদে আজ অর্ধদিবস সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘তফসিলের প্রতিবাদে আজ সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি পালন করবে বাম জোট। একতরফা নির্বাচনের ঘোষণা দেশকে আরও সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেবে, যার দায় এই সরকারকেই বহন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এই একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের সরকারের হুকুম তামিলকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো। ইতিহাস এদের ক্ষমা করবে না।’ এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল বের করে। পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি দৈনিক বাংলা, পুরানা পল্টন মোড়, বিজয়নগর ঘুরে পুনরায় পুরানা পল্টন মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বিরোধী সব দল ও অধিকাংশ জনগণের মতামত উপেক্ষা করে ঘোষিত এই তফসিল বাসদ প্রত্যাখ্যান করছে। একই সঙ্গে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তফসিল পরবর্তী এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন উচ্ছেদ করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে আজ বাম গণতান্ত্রিক জোট আহূত দেশব্যাপী অর্ধদিবস সর্বাত্মক হরতাল সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, এই তফসিলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি একতরফা নীলনকশার নির্বাচনের পথ খুলে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। অথচ, তারা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সব বিরোধী দল যখন নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে রয়েছে, নির্বাচন কমিশন নিজেই বলেছে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, সেখানে সংকটের সমাধান না করে গণদাবি উপেক্ষা করে এই তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সংঘাত-সহিংসতার পরিস্থিতি তৈরি করল। এর দায় সরকারকে যেমন নিতে হবে, নির্বাচন কমিশনকেও নিতে হবে। অনতিবিলম্বে এই তফসিল স্থগিত করা উচিত। সরকারের চাপে যদি সেটা না পারে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ করা উচিত।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ গতকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করে গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তোপখানা, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকা প্রদক্ষিণ করে। তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান সমুন্নত থাকল, সংবিধানের প্রাধান্য সংরক্ষিত হলো, নির্বাচনবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ও সন্ত্রাসবাদী শক্তি পরাজিত হলো। তারা বলেন, যারা নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা করবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করা হবে।’ তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ। তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় দলটির প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা-১৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ, জনগণের অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য হবে বলে আশা করছি। জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, দেশবাসীর সঙ্গে সঙ্গে আমরাও এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’

সর্বশেষ খবর