শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল

পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। চাপের মুখে ভেঙে যাওয়ার ইতিহাস কফিনবন্দি করতে পারলেন না টেম্বা বাভুমা, কুইন্টন ডি কক, ফন ডার ডুসেন, ডেভিড মিলাররা। ইতিহাসের নগরী কলকাতায় ইতিহাস গড়তে পারল না আফ্রিকা মহাদেশের নবম বৃহত্তম দেশটি। মুছতে পারল না ট্যাগ হয়ে লেগে থাকা চিরস্থায়ী ‘চোকার্স’ শব্দটি। বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়েই থাকল। টানটান উত্তেজনা ছড়ানো দ্বিতীয় সেমিফাইনাল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ১৬ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে। উইনিং বাউন্ডারি স্কোরিং শটটি মেরেছেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ফাইনাল খেলতে না পারার স্বপ্নভঙ্গের বেদনাহত প্রোটিয়াস টেম্বা বাভুমা শুভকামনা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াকে, ‘যোগ্যতর দল হিসেবেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি। ফাইনালের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে শুভকামনা জানাই।’

১ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিল ‘নন্দনকানন’ ইডেনে। সেই ইডেনেই প্রোটিয়াসরা স্বপ্ন দেখেছিল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অদম্য অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ফাইনালের ‘স্বপ্ন’ দুঃস্বপ্ন হয়ে রয়ে যায়। টেম্বা বাভুমারের জন্য ইডেন যেমন ঐতিহাসিক, তেমনই ঐতিহাসিক পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার কাছেও। তাসমান পাড়ের দেশটি প্রথমবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৮৭ সালে। আজ থেকে ৩৬ বছর আগে ইডেন গার্ডেনে অ্যালান বোর্ডারের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। বোর্ডারের উত্তরসূরি প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ষষ্ঠ শিরোপার টার্গেটে নামবে আহমেদাবাদে। ১৯ নভেম্বর রবিবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে কামিন্স বাহিনী মুখোমুখি হবে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, মোহম্মদ সামির ভারতের। ভারত খেলবে তৃতীয়বার বিশ্বসেরা হতে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জিতেছে পাঁচবার ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ সালে। রানার্সআপ দুবার ১৯৭৫ ও ১৯৯৬ সালে। এবার নিয়ে অষ্টমবারের মতো ফাইনাল খেলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপরাষ্ট্রটি। এবার নিয়ে সপ্তমবার সেমিফাইনাল খেলেছে দলটি। কিন্তু হারেনি একবারও। অবিশ্বাস্য! ভারত ফাইনালে উঠেছে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে প্রথম সেমিফাইনালে কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারের জোড়া সেঞ্চুরি এবং সামির রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে চতুর্থবারের মতো ফাইনালে উঠেছে স্বাগতিকরা। ২০ বছর পর দুই দেশ আবার শিরোপার মুখোমুখি হবে। ২০০৩ সালে ফাইনালে ভারতকে হারায় অস্ট্রেলিয়া।

টুকরো টুকরো মেঘে গতকাল ঢাকা ছিল ইডেনের আকাশ। এমন বৈরী আবহাওয়ায় পেসাররা গতি, সুইং ও বাউন্সে ভেঙেচুরে দেবেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের প্রতিরোধ। অথচ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখা প্রোটিয়াস অধিনায়ক বাভুমা সবাইকে অবাক করে টস জিতে ব্যাটিং নেন। অসি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্সরা গতি ও বাউন্সে ২১২ রানে গুটিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। অবশ্য সতীর্থদের চরম ব্যর্থতার দিনেও উজ্জ্বল ছিলেন ‘কিলার’ মিলার। টি-২০ ক্রিকেটে ৩৫ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া মিলার গতকাল একাই খেলেছেন ১০১ রানের হিমালয়সম দৃঢ়তার ইনিংস। ১৭০ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয়। ১১৬ বলে সেঞ্চুরির ইনিংসটি সাজানো ছিল ৮ চার ও ৫ ছক্কায়। টার্গেট ২১৩ রান। ওভারপ্রতি ৪.২৫। এমন টার্গেটেই অসি ওপেনার ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার ৬.১ ওভারে ৬০ রান যোগ করেন। ওয়ার্নার ব্যক্তিগত ২৯ রানে আউট হন মারক্রামের বলে। ইনিংসটিতে ছক্কা মারেন ৪টি। হেড ৬২ রান করেন মাত্র ৪৮ বলে। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর হঠাৎ ছন্দ হারিয়ে ফেলে কামিন্স বাহিনী। সেখান থেকে টেনে তোলেন স্টিভ স্মিথ ও জশ ইংলিশ। স্মিথ আউট হন ব্যক্তিগত ৩০ রানে। ইংলিশ ২৮ রান করলেও ২২ রানের হিমালয়সম দৃঢ়তার জুটি গড়েন কামিন্স ও স্টার্ক। দুজনে চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে অষ্টমবারের মতো ফাইনালে নিয়ে যান। অধিনায়ক কামিন্স ২৯ বলে ১৪ ও স্টার্ক ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন ৩৮ বলে।

সর্বশেষ খবর