শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিএনপিকে কাদের

নির্বাচনে আসুন দরজা খোলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সবার জন্য নির্বাচনের দরজা খোলা আছে। আসুন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। বিএনপিকে বলব মত পাল্টিয়ে নির্বাচনে অংশ নিন, দরজা খোলা আছে, আপনারা নির্বাচনে এলে স্বাগত জানাই।

গতকাল দুপুরে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। তফসিল-পরবর্তী দলের প্রতিক্রিয়া ও নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে ওবায়দুল কাদের ঢাকা মহানগরী উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আগামীতে ১৪ দল জোটগত না এককভাবে নির্বাচন হবে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সময় হলেই পরিষ্কার হবে। অপেক্ষা করুন। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা একেবারেই কম।

তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সামনের কয়েকটা দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (ক্রুশিয়াল)। ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে কত ফুল ফুটবে। আর শীতকাল তো এসে গেছে, কিছু ফুল ফোটার সময়ও এসে গেছে। এখন কোন ফুল কোথায় ফুটছে... হঠাৎ জেগে উঠবে, অপেক্ষা করুন।

বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না বা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও বলছেন কারচুপি হয়েছে, আজ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেননি। কাজেই এসব প্রশ্ন করে লাভ নেই। তাদের বেলায় ঠিক আছে, আমাদের বেলায় সমস্যা? ট্রাম্প বলেছেন তিনি বাইডেনকে মানেন না। অথচ তাদের আরেকটা নির্বাচন সামনে। গণতন্ত্রের ভেতরে দোষত্রুটি সব জায়গায় আছে। কেউ পারফেক্ট না।

রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপের জন্য মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠি এবং সিইসির রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংলাপের সময় এখন আর অবশিষ্ট নেই। বুধবার এটা আমি বলেছি। মিস্টার লুর চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। সেই চিঠির জবাব আমরা অবশ্যই দেব। দুই এক দিনের মধ্যে জবাব দেব। এটা একটা সৌজন্যবোধ, শিষ্টাচারের বিষয়। এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যেও পড়ে। নির্বাচন সামনে রেখে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইউরোপ-আমেরিকা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। চিঠি চালাচালি হয়েছে। কখনো ভগবান আসে, কখনো অবতার আসে, এসব অনেক শুনেছি। বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামায়। আজ বিশ্ব কোথায়? কী হচ্ছে ফিলিস্তিনে? কী করতে পারল জাতিসংঘ? কী করতে পারল যুক্তরাষ্ট্র? কী করতে পারল ইউরোপ? ইউক্রেন জ্বলছে, কী করল ইউরোপ? আর বাংলাদেশের একটা নির্বাচন নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? আমি এসবের উত্তর দিতে রাজি না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শুক্রবার বিকাল ৩টায় তেজগাঁও কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক হবে। এতে অংশ নেবেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়নপত্র বিক্রি উদ্বোধন করবেন তিনি। উদ্বোধনের পরদিন শনিবার সকাল ১০টা থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া যাবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, শুক্রবার বিকাল ৩টায় তেজগাঁও কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক হবে। এতে অংশ নেবেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়নপত্র বিক্রির উদ্বোধন করবেন তিনি। উদ্বোধনের পর শনিবার সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সবাই কিনতে পারবেন।

বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন ও জনগণের রায় ছাড়া কখনো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়নি। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের পথে রাষ্ট্রক্ষমতা বদলের চিন্তা করে না। নির্বাচনে আমরা সব সময় গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছি। জনগণের ভোট ও জনগণের অধিকারের জন্য আমরাই সংগ্রাম করেছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করা হয়। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না, তখন এই ২১ বছর গণতন্ত্র ছিনতাই হয়ে যায়। এ ২১ বছর আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্রচর্চা করতে দেয়নি। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিল। তারপর খালেদা জিয়াও একই কায়দায় স্বৈরাচারী গণতন্ত্র কায়েম করেছিল।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। এই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কে দিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটা সময় নির্বাচন কমিশন ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে। সেটা স্বাধীনভাবে রূপ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাস্টারমাইন্ড বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিএনপির কাকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ কোনো হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে না।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, তারা এখন সংলাপ করার কথা বলেন। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা সংলাপের জন্য আহ্বান করেছিলেন। বহু দল গেলেও বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়াকে সংলাপে আমন্ত্রণ করেছিলেন কিন্তু তিনি কী ব্যবহার করেছিলেন? আমাদের সঙ্গে এই ব্যবহার, আমাদের দোষ কোথায়, অপরাধ কোথায়? ওবায়দুল কাদের বলেন, শঙ্কার এত পাহাড়, এত খরস্রোতা নদী পার হয়ে এলাম। এখন আবার কাকে ভয় পাব? এত বিপৎসংকুল দরিয়া পার হলাম, তারপর আবার ভয় কীসের? কোনো ভয় করি না। প্রতিহত যারা করবে, আমরা লাগব না, বাংলাদেশের জনগণ ও ভোটাররা তাদের প্রতিহত করবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরুল্লাহ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সালমান এফ রহমান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দীন নাছিম, আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, আবদুস সবুর, আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, বিপ্লব বড়ুয়া, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ড. শাম্মি আহমেদ, ডা. রোকেয়া সুলতানা, দেলেয়ার হোসেন, ড. সেলিম মাহমুদ, শামসুন নাহার চাঁপা, নজিবুল্লাহ হিরু, সায়েম খান, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, সাহাবুদ্দিন ফরাজি, আজিজুজ সামাদ আজাদ ডন, মেরিনা জাহান কবিতা, মারুফা আকতার পপি, সানজিদা খানম, পারভিন জামান কল্পনা, রেমন্ড আরেং, রিয়াজুল কবির কাওছার, মহানগরীর শেখ বজলুর রহমান, এস এম মান্নান কচি, আবু আহমেদ মন্নাফি, ঢাকা জেলার বেনজির আহমেদ, পনিরুজ্জামান তরুণ, হালিমা আকতার লাবণ্য, যুবলীগের শেখ ফজলে শামস পরশ, তাজউদ্দিন আহমেদ তাজ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, আফজালুর রহমান বাবু, যুব মহিলা লীগের ডেইজি সারওয়ার, শারমিন সুলতানা লিলি, মহিলা আওয়ামী লীগের মেহের আফরোজ চুমকি, ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর