শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নির্বাচন কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

কেউ নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

কেউ নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না

বিএনপিসহ সব দলকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। সবাই আসুন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। নির্বাচনে জনগণের কাছে গিয়ে জনগণের ভোট চান। তবে বিএনপি এবং তাদের যে জোট আছে তাদের শুধু একটা কথা বলব, এই আগুন নিয়ে খেলা এটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। অতীতে তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে, পারেনি। এটাও (দ্বাদশ নির্বাচন) তারা বানচাল করতে পারবে না। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা জ্বালাও-পোড়াওয়ে ভীত না হয়ে সাংবিধানিক নিয়ম মেনে সময়মতো নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা দিয়েছেন। আজকে যারা নির্বাচন বানচালের জন্য অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে এদের কিন্তু ক্ষমা নেই। ভোটের মধ্য দিয়েই সরকার গঠন হবে, অস্ত্রহাতে না, রাতের অন্ধকারে না। এ সময় দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এখন নির্বাচন যেন যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য জনগণ ও দেশবাসীর সহযোগিতা আমি চাই। নির্বাচন করতে দেবে না বলে আগেও আগুন দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে। আগুন নিয়ে খেলা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। দেশের মানুষ নির্বাচন বানচাল করতে দেবে না।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল ৩টায় শুরু হওয়া জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৪টি উপকমিটি গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর নাম ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় কমিটির সদস্যসচিব ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ বাদে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা শ্রমিকদের জন্য কী করেছে? যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বসে হুকুম দেয়, আর এখানে যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- যে দলের নেতাই নেই, মু-ুহীন দল, মাথাই নাই; যে নেতা কখনোই আসবে না। আসার ইচ্ছা থাকলে চলে আসতে পারত। তার হুকুমে বাংলাদেশে যারা মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে, আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে তাদের ক্ষতি করছে। এরকম একটা দায়িত্ব তারা নিচ্ছে কেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচন করতে চায় না, কারণ এটা মু-ুহীন একটা দল হয়ে গেছে। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া নির্বাচন করতে পারবে না। এজন্য তারা নির্বাচন চায় না। চায় না বলেই নির্বাচন বানচাল করতে হবে। বানচাল করে তাদের লাভটা কী হবে? বাংলাদেশের মানুষের লাভটা কী হবে? তিনি বলেন, যারা এ ধরনের নেতৃত্বের হুকুমে মানুষের ক্ষতি করে তারা তো অভিশাপ পাবে, মানুষের অভিশাপে পড়বে। যে কয়টা মানুষ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার, তারা তো অভিশাপ দিচ্ছে, তাদের পরিবার দিচ্ছে। কারণ, তাদের জীবনজীবিকা, পোড়া ঘা নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। সবাইকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই যে অপরাধ করেছেন জনগণের কাছে, বিশেষ করে জামায়াত-বিএনপি, অগ্নিসংযোগ করে জনগণকে হত্যা ও জানমালের ক্ষতি করেছে, সেজন্য জাতির কাছে মাফ চেয়ে তারপর নির্বাচনে আসেন সেটাই আমরা চাই। নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। তিনি বলেন, নির্বাচন জনগণের অধিকার, এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। সময় এসেছে নির্বাচন হবে। জনগণ ভোট দেবে। কারও যদি সাহস থাকে এসে ইলেকশন করবে। জনগণের ভোট পাওয়ার আস্থা থাকে তাহলে ভোট পাবে। জনগণ যাকে ভোটে নির্বাচিত করবে সে-ই সরকার গঠন করবে। বিএনপি-জামায়াত জনগণের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে হামলা চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা সাধারণ মানুষ হত্যা করার পরিকল্পনা করে তাদের মানুষ কেন ভোট দেবে? তাদের ওপর মানুষ কেন আস্থা রাখবে? আস্থা রাখে না। মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না, তারা ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। তারা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত। সেটা তো মাথায় রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা নির্বাচন বানচালের জন্য অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে এদের কিন্তু ক্ষমা নেই। বিএনপি-জামায়াতের হাত থেকে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা সন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। যারা অগ্নিসন্ত্রাস করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার আর কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা আছে জানিয়ে দলটির সভানেত্রী বলেন, আমরা মানুষের সেবা করেছি বলেই আমাদের ওপর মানুষের সমর্থন-আস্থা-বিশ্বাস রয়েছে।

অতিবাম ও অতিডানপন্থিরা একাকার : বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন অতিবামপন্থি ও অতিডানপন্থিরা মিশে একাকার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কার যে কী আদর্শ, কে যে কতটুকু বিচ্যুত হলো সেটাই প্রশ্ন। অতিবামদের আদর্শ নেই, তারা বলে, সরকারকে উৎখাত করতে হবে। আমাদের অপরাধটা কী? আর বলে, নির্বাচন বানচাল করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। অথচ তাদের হাতে গড়া দলের কাছ থেকে শুনতে হয় নির্বাচনের কথা! বিএনপির আমলে যত নির্বাচন হয়েছে মানুষ ভোটই দিতে পারেনি, ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশে সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। মানুষের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। একটা দল টানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর মানুষের বিশ্বাস-আস্থা অর্জন করা কঠিন। আমরা পরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়ন করেছি। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এ ১৪ বছরে বাংলাদেশে বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি। আজকে মানুষকে বিদেশি পুরনো কাপড় এনে পরাতে হয় না। দেশের মানুষকে খাদ্যের জন্য হাহাকার করতে হয় না। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় সরকারের প্রতিবাদ জানানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হলো যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ পুড়িয়ে মারে, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেসব দলের কাছে কোনো আওয়াজই পাচ্ছি না, কিছুই বলছে না। দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই মানুষের পাশে থাকে। বাস, ট্রেন, উন্নয়ন কর্মকান্ডের সরঞ্জাম বহনকারী গাড়িতে আগুন দেওয়ার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এগুলো আমরা বরদাশত করব না। যেটা জনগণকে সহযোগিতা দিচ্ছে, জনগণ সুফল পাচ্ছে। তিনি বলেন, এরা (বিএনপি) মানুষকে মানুষ মনে করে না। এখন নিজেরা লুকিয়ে থাকে, আমার কথা হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? একজন তো এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, বয়স হয়ে গেছে, অসুস্থ। এ সময় খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতিটা দিয়েছি। সে স্বাধীনভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে। কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে যদি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হয় তাহলে তাঁকে কোর্টে যেতে হবে। আমরা বলেছি কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিয়ে অনুমতি নিক। সেটা না করে ওইটা নিয়ে আবার আন্দোলনের চেষ্টা করে। আসলে এরা অসুস্থতাকে ইস্যু হিসেবে দেখে। আদৌ যদি চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাত তাহলে বিএনপির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হতো। অসুস্থ মাকে দেখতে তার ছেলে আসে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ছেলে তো মাকে দেখতে এলো না কোনো দিন! এত যায় যায় ও মরে মরে অবস্থার কথা শুনেও ছেলে আর আসে না। ছেলে আসবে কী করে? সে তো ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলায় আমাদের নেতা আইভি রহমানসহ নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলা আমাদের না, আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলায় কানাডা থেকে এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। এদের দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তথ্য এসেছে।

ভোটার বাড়ানো এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ : বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে চায় আওয়ামী লীগ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন বিজয়ী না হয়, একই সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি যেন বাড়ে সে জন্য দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রার্থীদের বিশেষ নজর দিতে বলেছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোনোভাবেই যেন দলের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি না হয়।। এটি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ হারাতে পারবে না। এবারে নির্বাচন অনেক চ্যালেঞ্জিং। গত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো এবার হবে না। এবারে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। আমরা সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাই। সে ক্ষেত্রে বিএনপি যদি নির্বাচনে না-ও আসে, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে এটি খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও যেন কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হয়, সেটিও মাথায় রাখতে হবে। আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। এ সময় এক নারী নেত্রী দলীয় সভানেত্রীর উদ্দেশে বলেন, এবার ভোটার উপস্থিতি যেন বাড়ানো হয়, সে জন্য তাগিদ দেওয়া উচিত। জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো উচিত। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কত পার্সেন্ট ভোট পড়ে? অনেকেই ভোট দিতে আসে না। তবে আমরা চাই, ভোটাররা উপস্থিত হয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিক। আমি চাই ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ ভোটারের উপস্থিতি। এটি আপনারা নিশ্চিত করবেন। তৃণমূল নেতাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেবেন। আমি আগেও বলেছি, কেউ যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না হন। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমি কারও মুখ দেখে দেব না। আমার কাছে সবার রিপোর্ট আছে, সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে যারা যোগ্য তারা মনোনয়ন পাবেন। যারা মনোনয়ন পাবেন না তারা মন খারাপ করবেন না। এটা আপনাদের কর্মফল। যে যতটুকু জনগণের জন্য কাজ করেছেন, সেই অনুযায়ী ফল পাবেন। নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের মধ্যে রেষারেষি করা যাবে না। কারও বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর