শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
জোট নিয়ে চ্যালেঞ্জ দুই দলে

নির্বাচন থেকে সমমনাদের বিরত রাখা নিয়ে চ্যালেঞ্জে বিএনপি

ভয়ভীতি কাটিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে চাঙা রাখা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে দলটিকে

শফিউল আলম দোলন

এবার যে কোনো মূল্যে সরকার পতন আন্দোলনের সফল পরিণতি চায় বিএনপি। নির্বাচনে সরকারকে কার্যত এক ঘরে করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। এ জন্য সমমনা রাজনৈতিক সব দল ও জোটকে ঘোষিত তফসিলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা ছাড়াও যুগপৎ-এর বাইরের দলগুলোকেও সঙ্গে আনার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে যারা এখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে আছে-তাদেরও তলে তলে বর্জন করানোর একটা শেষ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সব ভয়ভীতি কাটিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে চাঙা রাখার চ্যালেঞ্জও এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে দলটির সামনে। এসব কিছু উপেক্ষা ও মোকাবিলা করেই এবার চূড়ান্ত আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে চায় বিএনপি। এ জন্য সমমনা সব দলসহ সর্বস্তরের বিরোধী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে দলটির হাইকমান্ড।

এক্ষেত্রে ব্যাপক আশাবাদী দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত হয় এবং তাদের সমর্থন থাকে- সে আন্দোলনের বিজয় অনিবার্য। রাজপথে প্রতিটি কর্মসূচি জনগণই সফল করে তুলছে। জনতার বিজয় অত্যাসন্ন। সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমেই জনতার এই বিজয় আসবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ মুক্তি পাবে। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণকে আগামী রবি ও সোমবার দেশব্যাপী হরতালসহ প্রতিটি কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান। 

জানা গেছে, এত দিন কিছুটা আত্মগোপনের কৌশল অবলম্বন করলেও সামনের কর্মসূচিগুলো সফল করতে সর্বস্তরের দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখতে চান বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরকে টার্গেট করে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সব সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের প্রতি যে কোনো পরিস্থিতিতেই মাঠে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীদের রাজপথে বের হয়ে এসে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই কর্মসূচি ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সমমনা দল ও জোটসমূহের নেতা-কর্মীদেরও। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এরই মধ্যে অবরোধের মাধ্যমে তারা রাজধানী ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছেন। কিন্তু রাজধানীর ভিতরে সেভাবে কঠোর কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি। তাই এবার হরতালের মতো আরেকটু কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তবে এবারের আন্দোলন সফলের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। কারণ প্রতিটি কর্মসূচি ও পদক্ষেপই খুব পরিকল্পিতভাবে নেওয়া হচ্ছে। একতরফা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও গ্রেফতার-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। এ কথা মাথায় রেখেই বিএনপি নেতা-কর্মীরাও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কৌশলে প্রতিটি কর্মসূচি সফলের চেষ্টা করছেন।

জানা গেছে, এরই মধ্যে তৃণমূলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের পর্যন্ত সর্বস্তরেই আর কোনো রাখঢাক না করে রাজপথে নামতে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে। সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে  টানা পাঁচ দফা অবরোধ পালনের পর এবার হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোও এ হরতাল কর্মসূচি ডেকেছে। আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে ভাবছেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এসবের সঙ্গে সর্বস্তরের বিরোধী দলগুলোকে একাট্টা হিসেবে পাশে চায় বিএনপি। তাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। তাদের প্রত্যাশা- শেষ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি আরও বড় ধরনের চমক যোগ হতে পারে তাদের এই আন্দোলনের পক্ষে। 

বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের তাগিদের মুখে গত বুধবার জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া তফসিল ঘোষণা- কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করছে বিএনপিকে।

টানা এক সপ্তাহ ধরে দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড তারেক রহমান। এসব বৈঠকে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জেলা ও মহানগর এবং সর্বস্তরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সামনের প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, বুধবার জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছোট-বড় অধিকাংশ বিরোধী দলই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলেও তারা ঘোষণা দিয়েছে। তাদের এই মনোভাবকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে সিনিয়র নেতাদের এ ব্যাপারে দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

যেসব বিরোধী রাজনৈতিক দল বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, তাদের এ অনড় অবস্থান ধরে রাখার বিষয়ে বিএনপি নানাভাবেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কারণ এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দলকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে বিএনপির কাছে তথ্য রয়েছে। কিন্তু এসব করে কোনো দলকেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে নিতে পারবে না বলে বিএনপি নেতারা বিশ্বাস করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে জনগণের হাতে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া। এ জন্য শান্তিপূর্ণ হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করার জন্য জনগণ আজ রাজপথে নেমেছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিজয় হবেই। জনগণ এখন সেই বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। আর সরকারের পতন অনিবার্য।

বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট ছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বিজেপি, এনডিএম, এবি পার্টিসহ অধিকাংশ বিরোধী দলই তফসিল প্রত্যাখ্যান করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এসব দল নানা কর্মসূচিও পালন করছে। কাল রবি ও সোমবার সারা দেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর