রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির চোখ বিদেশিদের দিকে

৩০ নভেম্বরের পর অসহযোগ কর্মসূচির পরিকল্পনা ♦ হরতাল অবরোধ অব্যাহত থাকবে ♦ সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি

শফিউল আলম দোলন

বিএনপির চোখ বিদেশিদের দিকে

আন্দোলনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বের দিকে দৃষ্টি বিএনপির। গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার দিকে বিশেষ নজর রাখছে দলটি। যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ওই চিঠির জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করছে রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে হলে সংলাপই একমাত্র পন্থা। এমনকি এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে  বিরোধী নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাটাও সম্ভব। কিন্তু এমন কোনো কিছু না হলে ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই পরিস্থিতি পাল্টে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে। তা ছাড়া খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি দেশের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ আসতে পারে বলেও দলের নেতারা মনে করছেন। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছেন।

৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। পূর্ণমাত্রায় নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশব্যাপী চলছে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার অভিযান। এ অবস্থায় রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখন কী করবে- এ প্রশ্ন সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু করা হলেও সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন থেকে পিছু হটছে না বিএনপি। আপাতত চলমান আন্দোলন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে দলটি। সামনের দিনগুলোয় প্রতি সপ্তাহে দু-এক দিন বিরতি দিয়ে আরও কয়েক দফা হরতাল কিংবা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে যে কোনো সময় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। যে কোনো সময় আরও বড় ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। এরপর ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে দলটি। ওই সময় হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তখন তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘অসহযোগ’ ঘোষণা করে সব ধরনের কর্মসূচিই পালন করা হবে। কারণ বিরোধীদলীয় নীতিনির্ধারকদের মতে, হরতাল-অবরোধ, অবস্থান, ঘেরাওসহ আন্দোলনের যত রকমের কর্মসূচি আছে সবকিছুর সমন্বিত কর্মসূচিই হলো ‘অসহযোগ’ আন্দোলন। তখন আর পুলিশ কিংবা সিভিল প্রশাসনের কোনোরকমের অনুমতির অপেক্ষা করা হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু বিএনপি ভাবছে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে এ তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যানে না। চলমান জন আন্দোলন সফল হবেই ইনশা আল্লাহ। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি আসছে। সরকার গায়ের জোরে আবারও একটা তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে জনগণ প্রাণ হাতে নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। বিশ্ববিবেক আজ জাগ্রত। বাংলাদেশের মানুষকে নিষ্ঠুর সরকারের শোষণ-অত্যাচারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামকে সমর্থন দিচ্ছে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ। জানা গেছে, বিএনপি ও তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমমনা দলগুলো এখনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে আছে। পাশাপাশি তারা সরকারের বিরুদ্ধে থাকা অন্য দলগুলোকে নিজেদের পক্ষে রাখতে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ঘনিয়ে এলে কোনো দল শেষ পর্যন্ত মত পাল্টে আওয়ামী লীগের কাফেলায় যোগ দেয় কি না সেদিকেও যথেষ্ট খেয়াল রাখছে বিএনপি। এবারের আন্দোলনের সফলতা নিয়ে বিএনপি হাইকমান্ড খুবই আত্মবিশ্বাসী। তা ছাড়া খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি দেশের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ আসতে পারে বলেও তাদের ধারণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে দলের স্থায়ী কামিটি, কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসব বৈঠকে আন্দোলন সম্পর্কে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাবেক এমপি, সম্ভাব্য প্রার্থী ও পদে থাকা নেতাসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মাঠে উপস্থিত থেকে কর্মসূচি সফল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একে বিএনপির জন্য জীবনমরণের আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচ দফা দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে আজ ভোর ৬টায় সারা দেশে আবারও ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। একই কর্মসূচি পালন করছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট, এলডিপিসহ ৩৯টি রাজনৈতিক দলও। যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থেকে জামায়াতে ইসলামীও পৃথকভাবে একই কর্মসূচি পালন করছে।

সর্বশেষ খবর