রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কানাডীয় টিভি ক্যামেরায় বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কানাডীয় টিভি ক্যামেরায় বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেখা গেছে কানাডার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন সিবিসির এক ভিডিও প্রতিবেদনে। টরন্টোর এক রাস্তায় তাকে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল সিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায় এ আসামিকে। গতকাল সিবিসি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দ্য ফিফথ স্টেট’-এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের ৪২ মিনিটের এ প্রতিবেদনটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হয়।

প্রতিবেদনে নূর চৌধুরীর কানাডায় পালিয়ে যাওয়া, ২৭ বছর সেখানে থেকে যাওয়া এবং খুনের অভিযোগে হওয়া শাস্তি বাস্তবায়নে তাকে বাংলাদেশের ফেরত চাওয়ার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, টরন্টোর নিজ ফ্ল্যাটের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছেন নূর চৌধুরী। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আত্মগোপনে থাকা নূর চৌধুরীকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা অবস্থাতে ধরতে পারেন প্রতিবেদক। কিন্তু কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন অনুসরণের পর তাকে খুঁজে বের করেছেন ফিফথ স্টেটের অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা। প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, দীর্ঘদিন অনুসরণ করে কানাডার টরন্টো থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের এলাকা ইটোবিকো  থেকে তাকে খুঁজে বের করা হয়েছে। সেখানে একটি কনডোমিনিয়ামের তিন তলায় থাকেন বঙ্গবন্ধুর এই খুনি। ৭০ বছর বয়সী নূর চৌধুরী প্রতিদিন বিকালে বেলকনিতে আসেন। কানাডায় মুক্তভাবে জীবনযাপন করলেও প্রথমবারের মতো ক্যামেরায় তার দেখা পাওয়া গেল। সিবিসি টেলিভিশনের প্রতিবেদক যখন গাড়িতে যাওয়া নূর চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন, প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১-২ সেকেন্ড সময় চান প্রস্তুত হতে, পরক্ষণেই গাড়ি টান দিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নূর  চৌধুরীর কানাডায় পলাতক থাকা এবং খুনের দায়ে সাজা বাস্তবায়নে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও কানাডার বাংলাদেশ দূতাবাসের বিভিন্ন তৎপরতা দেখা যায়। এ বিষয়ে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাইকমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডাসহ (আইআরসিসি) কানাডিয়ান সরকার মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। নূর চৌধুরী কোথায় আছেন এবং তিনি কী করছেন তা জানা গেলেও কোনো তথ্য সামনে আসেনি। প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কানাডা খুনিদের মানবাধিকার দেখছে, কিন্তু আমার বা আমাদের স্বজনদের মানবাধিকার দেখছে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে একদল সেনাসদস্য গুলি করে হত্যা করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ওই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। দীর্ঘ বিলম্বিত বিচারে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত পাঁচজনকে ২০১০ সালে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয়। এ ছাড়া জিম্বাবুয়েতে একজন মারা  গেছেন এবং ছয়জন পলাতক রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে হত্যার পর বিভিন্ন দেশে কূটনীতিকের চাকরি করেন নূর। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে হংকং থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যান তিনি। ২০০২ সালে কানাডা সরকার তার (নূর চৌধুরী) উদ্বাস্তু হওয়ার বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করে। তখন বলা হয়, ন্যায়বিচার থেকে পলাতক রয়েছে নূর চৌধুরী। সেখানে আদালত আরও বলেন, সহজভাবে দেখা যায় নূর চৌধুরী বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। ২০০৬ সালে আবারও শরণার্থী হিসেবে আবেদন করলে তা নাকচ করে তাকে দেশত্যাগের নির্দেশ দেয় কানাডা। কিন্তু এরপর উচ্চ আদালতে রিভিউ পিটিশন আবেদন করেন নূর চৌধুরী। আবেদনে দেশে ফিরলে মৃত্যুদন্ড হবে জানিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়নের আবেদন জানান কানাডীয় আদালতে। কানাডার মৃত্যুদন্ডবিরোধী অবস্থানের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখন সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। এ বিষয়ে প্রতিবেদককে প্রাক্তন কানাডীয় বিরোধীদলীয় নেতা ও মন্ত্রী স্টকওয়েল ডে বলেছেন, এটা ৫০ বছর আগের ঘটনা হলেও সুরাহা হওয়া উচিত। প্রতিবেদনটিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মামলার আইনজীবী ও বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের বরাতে ও বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে দেখানো হয়, কীভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন নূর চৌধুরী।

সর্বশেষ খবর