রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভারত না অস্ট্রেলিয়া

ভারত না অস্ট্রেলিয়া

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল স্টেডিয়ামের ইমিগ্রেশন অফিসার তেমন কিছুই বললেন না। মুচকি হেসে শুধু জানতে চাইলেন, ‘ফাইনাল দেখতে এসেছেন?’ মাথা ঝাঁকাতেই পাসপোর্ট এগিয়ে দেন। এরপর ট্যাক্সিতে উঠে বসতেই ট্যাক্সিচালক বললেন, ‘বিশ সাল বাদ’। হোটেলের ডাইনিংয়ে নাস্তা করছেন, শুনবেন পাশ থেকে কেউ একজন বলছেন। আপনি হাঁটছেন, দেখবেন জটলা পাঁকিয়ে সবাই বলাবলি করছে। কী সেই কথা? ‘বিশ সাল বাদ’। মানে ‘২০ বছর পর’। শুধু গুজরাটের বাণিজ্যিক নগরী আহমেদাবাদ কেন, গোটা ভারতে এই মুহূর্তে ‘ভাইরাল’ কথা ‘বিশ সাল বাদ’! সাদা চোখে বাক্যটির অর্থ খুবই সহজ। যদিও এর অন্তর্নিহিত সত্য কেউ খুঁজে বের করতে যায়, তাহলে এর গভীরতা ভারত মহাসাগরের চেয়েও বেশি! খুব সহজ এর উত্তর-প্রতিশোধ! দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল ভারত। প্রতিপক্ষ ছিল রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত সেবার একরত্তি লড়াই করতে পারেনি। দেশে ফিরেছিল রানার্সআপ হয়ে। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দেশে ও বাইরে ভারত খেলতে নামে ক্ষুধার্ত বাঘ হয়ে। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে শতভাগ উজাড় করে চেষ্টা করে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ছিন্ন ভিন্ন করতে। ঘরের মাঠে এবার ২০ বছর আগের ফাইনালে হারের প্রতিশোধের সুযোগ পেয়েছে। ছন্দে থাকা রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, শুভমান গিল, মোহাম্মদ শামি, জশপ্রীত বুমরাহর ভারত চাইছে প্রতিশোধ। শুধু প্রতিশোধ নয়, ১৪ বছর পর পুনরায় বিশ্বসেরার মুকুট পরতে। অবশ্য হুমকি দিয়ে রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ২০১৫ সালের পর পুনরায় বিশ্বসেরার মুকুট পরতে চাইছে ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলওড, অ্যাডাম জাম্পার অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটা থেকে। ভারত খেলবে ১৯৮৩ ও ২০১১ সালের পর তৃতীয় শিরোপা জিততে। ২০০৩ সালে ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিতে। যদিও মিডিয়ার মুখোমুখিতে রোহিত শর্মা ফাইনালকে প্রতিশোধের ম্যাচ বলছেন না, ‘এটা ফাইনাল। প্রতিশোধের ম্যাচ নয়। আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলব।’ অসি অধিনায়ক কামিন্স বলেন, ‘ভারত দারুণ খেলছে। আমরাও দারুণ খেলছি। আমরা শিরোপা জিততেই খেলব।’ ঐতিহাসিক ফাইনালের সাক্ষী হতে উপস্থিত থাকতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ছাড়া শচীন টেন্ডুলকার, মহেন্দ্র সিং ধোনী, সৌরভ গাঙ্গুলিরা উপস্থিত থাকবেন। ম্যাচ শুরুর আগে ভারতীয় বিমান সেনারা ১০ মিনিটের শো করে মুগ্ধতা ছড়াবেন ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শককে। গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে ৫ অক্টোবর শুরু হয়েছিল ক্রিকেট মহাযজ্ঞ। ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে পর্দা নামছে বিশ্বকাপের। ১০ দলের বিশ্বকাপের ফাইনালসহ ৪৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৯ শহরে। শেষ ম্যাচের ভেন্যু গুজরাটের বাণিজ্যিক নগরী আহমেদবাদ। মোদি স্টেডিয়াম পরিচিত সর্দার বল্লব ভাই ও মোতেরা স্টেডিয়াম নামেও। ভারত ফাইনাল খেলবে টানা ১০ জয় নিয়ে। কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া নামছে দুই হারের পরের আট ম্যাচে টানা জয়ের আত্মবিশ্বাসে। ১৯৮৩ ও ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়ন এবং ২০০৩ সালের রানার্সআপ ভারত ফাইনালে উঠেছে চতুর্থবারের মতো। আরব সাগর পাড়ের নগরী মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে প্রথম সেমিফাইনালে রোহিত বাহিনী ৭০ রানে হারায় নিউজিল্যান্ডকে। ম্যাচটি কোহলি ও শামির জন্য স্মরণীয়। কোহলি বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫০টি সেঞ্চুরি করেছেন। ৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সেরা বোলিং করেছেন শামি। শামির বোলিংয়ে মুগ্ধ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘শামি অসাধারণ বোলিং করেছেন। বিশ্ববাসী আপনার বোলিং অনেকদিন মনে রাখবেন।’ ‘নন্দনকানন’ ইডেনে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে হারায় ‘চোকার্স’ দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বিশ্বকাপে একমাত্র অপরাজিত দল ভারত। রোহিত বাহিনী এবারের টুর্নামেন্ট শুরু করে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। এরপর আর পেছন ফেরে তাকায়নি। দুর্দান্ত ক্রিকেটে খেলে প্রতিটি দলকেই হারিয়েছে অবলীলায়। কোহলি ৩ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৭১১। এ ছাড়া রোহিত ৫৫০, আইয়ার ৫২৬, গিল ৩৯০ রান করেছেন। সামি ২৩, বুমরাহ ১৮ উইকেট নিয়েছেন। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্নার ৫২৮, মার্শ ৪২৬ রান করেছেন। ২২ উইকেট জাম্পা, ১৪টি হ্যাজলওড, ১৩টি করে স্টার্ক ও কামিন্স নিয়েছেন। ১ লাখ ৩২ হাজার আসনের মোদি স্টেডিয়ামে দুই দলই ফাইনালে লড়াই করবে সমানে সমান।

দুই দল এখন পর্যন্ত ১৫০টি ওয়ানডে খেলেছে। ভারতের ৫০ জয়ের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়া ৮৩টি। ১০টিতে কোনো ফল হয়নি। দুই দল এর আগে দুটি ওয়ানডে খেলেছে আহমেদাবাদে। দুটিই জিতেছে ভারত। বিশ্বকাপে দুই দল ফাইনাল খেলেছে একবার। ২০০৩ সালে ভারত হেরেছিল ১২৫ রানে। এ ছাড়া বিশ্বকাপে খেলেছে ১৩টি। অস্ট্রেলিয়ার ৮ জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় ৫টি।

সর্বশেষ খবর