রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জাপার মনোনয়ন জি এম কাদেরের হাতে, মহাজোটে চোখ রওশনের

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে আনন্দ মিছিল করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। শুধু খোকা নন, পার্টির অধিকাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। তবে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নির্বাচনে যাবেন কি না এখনো স্পষ্ট করেননি। পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে ভোটে যাওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করবেন। এদিকে গতকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাপা থেকে নির্বাচন কমিশনে আলাদা দুটি চিঠি গেছে। এসব নিয়ে দলে ও দলের বাইরে প্রশ্ন উঠেছে- কী হচ্ছে জাতীয় পার্টিতে? নির্বাচনি পুরনো নাটকই কি ফের নতুনভাবে মঞ্চস্থ হচ্ছে? নির্বাচন বিষয়ে দলীয় অবস্থান কবে স্পষ্ট হবে?

ইসিতে রওশনের চিঠি : জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হয়ে নির্বাচন করবে বলে জানিয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। গতকাল নির্বাচন কমিশনে পাঠানো চিঠিতে রওশন এরশাদ এ কথা জানিয়েছেন। চিঠিতে রওশন জানান, জাতীয় পার্টি বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এবারও চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা হবে শুধু নির্বাচনি জোট। নির্বাচনকালীন জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন। চিঠি ইসিতে পৌঁছে দিয়েছেন রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ। জি এম কাদেরের চিঠি : নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে জি এম কাদের নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির (নিবন্ধন নম্বর ১২) পক্ষ থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে আরপিওর আর্টিকেল ১২ (৩-এ)(বি) এবং ১৬ (২)(৩) অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রওশনের সাক্ষাৎ আজ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন। আজ দুপুর ১২টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া আজ বা কাল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরই মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করবে রওশন এরশাদের গ্রুপ। সূত্র জানান, রওশন এরশাদ মনোনয়নের যে তালিকা করেছেন তাতে জি এম কাদেরের নামসহ দলের বর্তমান সংসদ সদস্য এবং ত্যাগী নেতাদের নাম রয়েছে। ৩০০ আসনের তালিকা নিয়ে রওশন এরশাদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তবে রওশন এরশাদ ৫৫টি আসন পেতে অনড় থাকবেন। অন্যদিকে এটি হবে শুধু নির্বাচনি জোট। নির্বাচন শেষে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ‘লাঙল’ বা প্রার্থীর ইচ্ছা অনুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। জাপা সংলাপ চায় : জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রধান দুই দল সংলাপ নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ না দেখালেও জাতীয় পার্টি এখনো সংলাপ চায়। গতকাল জাতীয় পার্টির বনানী অফিসে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সংলাপ ছাড়া জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কি না সে বিষয়ে পার্টি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দু-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর জানিয়েছেন, দলের চেয়ারম্যান নির্দেশ দিলে নির্বাচন বানচালে রংপুর থেকে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাপা নেতারা। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যদি জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে যেতেই হয় তবে ১০০ সংসদীয় আসন ও নির্বাচনের পর ১০টি মন্ত্রীর পদ দেওয়ারও দাবি জানান নেতা-কর্মীরা। গতকাল নগরীর সেন্ট্রাল রোডের কার্যালয়ে পার্টির রংপুর জেলা, মহানগর, সব অঙ্গসংগঠনের সমন্বয়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের জন্য যৌথ কর্মিসভায় নেতারা এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

সর্বশেষ খবর