রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জোটবদ্ধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে জোটবদ্ধ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ১০টি দল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকছে আরও আট দল। এগুলো হলো- জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), গণতন্ত্রী পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (রওশন)। এই আট দলের সবাই জোটের সিদ্ধান্ত হলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে চায়। তৃণমূল বিএনপি প্রগতিশীল ইসলামী জোট নামে একটি জোটে নির্বাচন করার কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। সূত্র বলছে, প্রগতিশীল ইসলামী জোটে ১৫টি ইসলামী দল রয়েছে। তবে এই জোটে তৃণমূল বিএনপি ছাড়া অন্যদের নিবন্ধন নেই। তারা সোনালি আঁশ প্রতীকে নির্বাচন করবে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০টি রাজনৈতিক দল ইসিতে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই ইসিকে কোনো তথ্য জানায়নি। ইসিকে চিঠি দিল ১০ দল : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), গণতন্ত্রী পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, তৃণমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি। অন্যদিকে বিএনপিসহ ৩৪টি দল জোটবদ্ধ নির্বাচন করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের কথা ইসিকে জানায়নি। তবে বেশ কিছু দল দলীয় মনোনয়নপত্র কার স্বাক্ষরে সেই তথ্যও জানিয়েছে। জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, শনিবার জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল। আওয়ামী লীগ বলেছে, তারা জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচন করবে। আর সভাপতির স্বাক্ষরে তারা নমিনেশন দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, আওয়ামী লীগ কোন কোন দলের সঙ্গে জোট করবে এ কথা তাদের চিঠিতে বলা নেই। ?দুটি দল পৃথকভাবে বলেছে তারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে। সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে করবে বলেছে। গণতন্ত্রী পার্টিও নৌকা প্রতীকে ভোট করবে বলে চিঠি দিয়েছে। জাপার দুটি চিঠি এসেছে। জি এম কাদের বলেছেন, তাঁর সইয়ে মনোনয়ন হবে। আবার রওশন এরশাদ বলেছেন, তাঁরা জোটে ভোট করবেন। কোনটি আমলে নেবেন জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এটা কমিশন দেখবে। দুটি চিঠি এসেছে। কমিশন যেটা আমলে নেয়। সাইনিং অথরিটি কে হওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত দলের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব সাইনিং অথরিটি হন। জি এম কাদের সাইনিং অথরিটি হলে বিবেচনা কী হবে- প্রশ্ন করলে অশোক বলেন, এটা কমিশন বলতে পারবে। ১৫ নভেম্বর নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ ৭ জানুয়ারি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিতে হলে তফসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে তা নির্বাচন কমিশনকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। ওই সময় গতকাল শেষ হয়েছে। ওই সময়ের তথ্য জানাতে ১৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তথ্য জানানোর সময় গতকাল বিকালে শেষ হয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত প্রকৃত কতটি দল চিঠি দিয়েছে সেই সংখ্যা জানাতে পারেনি কমিশন। আজ সংখ্যা জানা যাবে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, যেসব রাজনৈতিক দল ইসিতে চিঠি দিয়েছে, সেগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তা স্পষ্ট হলো। যদিও যেসব দল জোট ছাড়া এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের ইসিতে তথ্য জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই। তবে নির্বাচন কমিশন মনে করছে, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে নির্বাচনে ২০টি দল নিজেদের প্রতীক ছেড়ে ভোট করে প্রধান দুই দলের মার্কা নৌকা আর ধানের শীষ নিয়ে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল তাদের জোটসঙ্গী ১০টি দল। শেষ পর্যন্ত ভোটের আগে ১১টি দল নৌকা প্রতীকে ভোট করতে চাইলেও প্রতীক বরাদ্দের সময় আরও পাঁচটি দলকে নৌকা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে আরও ১০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ধানের শীষে ভোট করার কথা জানিয়েছিল। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর তা দাঁড়ায় আট দলে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালু হওয়ার পর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি জোটের বড় দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকেই ভোটে অংশ নেয়। এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনও নৌকা প্রতীক ব্যবহার করে। জাতীয় পার্টি এই জোটে থাকলেও ভোট করে নিজেদের লাঙ্গল প্রতীকে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বর্জনে দশম সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের জায়গা পায়। নবম সংসদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে জোট করে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন একটি আসনে হাতপাখা প্রতীকে ভোট করে। বিকল্পধারার সঙ্গে জোট করে পিডিপি কুলা প্রতীক ব্যবহার করে কিছু আসনে। এ দলগুলোও দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে।

সর্বশেষ খবর