বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সুনসান নীরবতা। দুটি গেটেই ঝুলছে তালা। কবে নাগাদ এই তালা খুলবে তা কেউ জানে না। প্রধান গেটের একটু সামনে দুই পাশে পুলিশের কড়া পাহারা। গ্রেফতার এড়াতে নয়াপল্টনের আশপাশ এলাকা এড়িয়ে চলছেন নেতা-কর্মীরা। মাঝখানে এক দিন কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়ার পরপরই নেতা-কর্মীরা আসা-যাওয়া শুরু করেছিলেন কিন্তু সেদিনই সেখান থেকে ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতার আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে, নেতা-কর্মী তো দূরের কথা- অফিসের স্টাফ তথা কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি নিরাপত্তা প্রহরীদেরও দেখা নেই। এমনকি পথচারীরা ওই পথ মাড়ায় না। গতকাল সকাল ১০টায় রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপি কার্যালয়টির সামনে সরেজমিনে দেখা গেছে, গেটের ভিতরে প্রহরীদের টেবিলটা পড়ে রয়েছে আড়াআড়িভাবে। ময়লা আর ধুলো-বালির আস্তর পড়ে গেছে। লিফলেট, পোস্টারের ছেঁড়া অংশ, পানির খালি বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। দুটি প্লাস্টিকের চেয়ার উল্টে রয়েছে। সামনের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছেন দুই ডজন পুলিশ সদস্য। আশপাশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জনশূন্য সুনসান নীরবতার মধ্যে তারা জানান, এ অফিসে প্রতিদিনই সাংবাদিকরা আসেন কিন্তু বিএনপি নেতা-কর্মীরা কেউই আসেন না। পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। গতকার দেখা গেছে, কার্যালয়টির মূল গেটের ভিতরে একটি চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখা আছে নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো সেই চিঠি। যা গত ২ নভেম্বর তালাবদ্ধ অবস্থায় বিএনপি কার্যালয়ে রেখে যায় ইসির চিঠি বাহক। এর সঙ্গে আরও অনেক চিঠি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই চিঠিগুলো এখন পর্যন্ত কেউ খোলেননি। কিছুদিন আগেও সেখানে ‘ডু নট ক্রস, ক্রাইম সিন’ লেখা পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। এখন আর সেটি নেই। বিএনপি কার্যালয়ের পাশে থাকা জসিম নামের এক চা বিক্রেতা জানান, গত বুধবার সকালে দলীয় এই কার্যালয়ের সামনে কয়েকজন কর্মী জড়ো হয়ে স্লোগান দিলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এরপর পর থেকেই নয়াপল্টনের বিএনপি কার্যালয়টিতে দলীয় আর কাউকেই আসতে দেখা যায়নি। আশপাশের হকার ও দোকানদাররা জানান, বিএনপি অফিস বন্ধ থাকায় লোকজন আসে না। আর এতে তাদের বেচাকেনা প্রায় বন্ধ। দলীয় নেতা-কর্মী দূরের কথা, পুলিশ দিনরাত যেভাবে কড়া পাহারা দিচ্ছে, এতে ভয়ে পথচারীরাও পর্যন্ত দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছেন না। ডিএমপির পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেছেন, বিএনপি অফিসে পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ তালা দেয়নি। বিএনপি অফিসের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই তালা ঝুলিয়ে গেছেন। আমরা শুধু নিরাপত্তা দিচ্ছি। যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।