মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির নির্বাচনের বিকল্প নেই : আখতারুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির নির্বাচনের বিকল্প নেই : আখতারুজ্জামান

বিএনপির নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি ছাড়া এককভাবে লড়ার কারও ক্ষমতা নেই। মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। যা আওয়ামী লীগের নেতাদের এবার নিজেদের যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তায় নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। এতে দল বা প্রতীকগত কোনো প্রতিযোগিতা হবে না। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতি এলাকায় বিভিন্ন স্থানীয় অনুকূল বা প্রতিকূল প্রতীক দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে যাতে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়। সরকার খুবই পরিকল্পিত ঝুঁকি নিয়েছে। সরকারের সবচেয়ে অনুকূল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপক্ষে লড়ার মতো কোনো যোদ্ধা নেই। তিনি বলেন, আমি লড়তে চাই। বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার কারণে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক বিএনপির সব প্রার্থীরা হতাশ হবেন না। দল ও দেশের জন্য সর্বপরি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য অবশ্যই আপনাদেরকে নির্বাচনে আসতে হবে। জামায়াত-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত নেতার মাথা কবজা করে নিয়েছে। সেখান থেকে তারেক রহমানকে মুক্ত করা আপাতত আর সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজতে হবে। তিনি বলেন, চরম বাস্তবতা হলো- সব বিরোধী দল মিলেও নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন করতে সরকার সবাইকে সন্ত্রাসী বানিয়ে ফেলবে এবং আমাদের বিদেশি বন্ধুরাও তাতে সায় দেবে। আমরা সবাই কলঙ্কিত হয়ে যাব। দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে। বিএনপি বা বিএনপির নেতা-কর্মীরা যদি নির্বাচনে না যায় তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশের ইচ্ছায় এবং কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে নেবে। অথচ যদি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একজোটে নির্বাচনে যেত তাহলে নতুন একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হতো। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ না হলে নির্বাচনের দিন থেকেই চূড়ান্ত ও চরম আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারা যেত। কিন্তু আজকে নির্বাচন বয়কট করে এবং নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে আমরা দেশ ও জাতির সঙ্গে বেইমানি করতে যাচ্ছি। জনগণ এক দিন আমাদের কুলাঙ্গার বলে গালি দেবে। তাই যে ভাবে হোক বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে।

বিএনপির সব শক্তিশালী প্রার্থীদের কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ তৃণমূল বা অন্য কোনো দলে যোগদান করবেন না। যার যার নির্বাচনি এলাকায় দুই বা তিনজন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন। তার মধ্যে যাদের মনোনয়ন বৈধ হবে তারা সবাই নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন। যদি পরিবেশ অনুকূলে থাকে তাহলে শেষ পর্যায়ে একজনকে বিজয়ী করে আনবেন। যদি এভাবে সারা বাংলাদেশে বিজয়ী হতে পারেন তাহলে নির্বাচনের পরপরই নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন এবং একটি সংসদীয় দল তৈরি করবেন। সবার নির্বাচনের মূল ইশতেহার হবে- খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সব সাজা ও মামলা প্রত্যাহার। বিএনপির সব নেতা-কর্মীদের মুক্তি, সব মামলা ও সাজা প্রত্যাহার। তারেক রহমানের সব সাজা ও মামলা প্রত্যাহার। মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামিক চেতনার পক্ষে বিএনপিকে পূর্ণ সংস্কার। বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং প্রকাশ্য সম্মেলন ও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রচলন। ভারতসহ কোনো বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা নয় বরং পূর্ণ সহযোগিতার ও বন্ধুত্বের নিশ্চয়তা। বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও প্রকাশ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। আইনের শাসন ও পূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় পূর্ণ জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতার পূর্ণ স্বীকৃতি, মূল্যায়ন ও রাষ্ট্রীয় সব কাজে আল্লাহ ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) পরে স্থান ও বিশ্বাস এবং স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে শহীদ জিয়ার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস। দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের স্বার্থে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা। তিনি বলেন, ওপরের আলোচিত অবস্থার পরিপেক্ষিতে যদি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তাহলে তারা সরাসরি নিজ নিজ এলাকায় প্রার্থী হতে পারেন। যারা সংসদ সদস্য ছিলেন না তারা ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন সংগ্রহ করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে যান। হিরো আলম যদি পারে তাহলে আপনারা পারবেন না কেন? দল ও দেশের প্রয়োজনে আপনাদের নির্বাচনে আসা উচিত। নির্বাচনের পরে আবার বিএনপিতে চলে আসবেন। আইন বা সংবিধান কোনো বাধা হবে না। স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচনের পরে যে কাউকে সমর্থন দিতে পারা যায় বা যে কোনো দলে যেতে পারা যায়। এতে কোনো বাধা নেই। স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে আপনাদের সাথী বা নেতা-কর্মী দেখিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদেরকে আপাতত পুলিশের হামলা, মামলা থেকে রক্ষা করতে পারবেন। তারা মুক্ত মানুষ হিসেবে নির্ভয়ে এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘোরাফেরা করতে পারবেন। তাছাড়া যারা জেলে আটক আছে তাদের আপনাদের নির্বাচনে প্রয়োজন বলে জেল থেকে বের করে নিয়ে আনতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর