মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মীর কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর চার থানায় পুলিশের করা মামলায় বিএনপির ১০৮ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার পৃথক তিন আদালত থেকে এসব রায় ঘোষণা করা হয়। দণ্ডিতদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নিরব, বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু রয়েছেন। এদিকে ১০ বছর আগের মামলায় জেলা ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিবসহ পাঁচজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন রংপুরের একটি আদালত।

এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আদালত বিএনপির মামলাগুলো দ্রুত রায় দিতে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে মামলার তারিখ দিচ্ছেন। অফিস সময়সূচির পরও মামলার শুনানি করা হয়। অথচ সংশ্লিষ্ট আদালতে এক যুগ আগের মামলাও পড়ে আছে। শুনানি হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা সাক্ষ্য দিতে এসেও ফিরে যাচ্ছেন। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এসব মামলাকে ভিত্তিহীন রাজনৈতিক বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘মামলার কার্যক্রমে যথাযথ আইন প্রয়োগ হচ্ছে না। যেনতেনভাবে রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। মূলত বিচারের নামে অবিচার করছে।’

নিউমার্কেট থানার মামলায় হাবিব-উন নবী সোহেলসহ বিএনপির ১৪ নেতা-কর্মীর কারাদণ্ড : পুলিশের ওপর হামলা ও দায়িত্ব   পালনে বাধা দেওয়ার ঘটনায় রাজধানীর নিউমার্কেট থানার মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলসহ ১৪ জনকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ আসামিদের অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারায় আসামিদের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে এবং দণ্ডবিধির ৩২৩ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরও দুই মাসের কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক।

দণ্ডিতদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নিরব, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু রয়েছেন

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেটে পুলিশের কাজে বাধা দেন আসামিরা। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

তেজগাঁও থানার মামলায় বিএনপি নেতা নিরবসহ সাতজনের দণ্ড : ১০ বছর আগে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় করা নাশকতার মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নিরবসহ দলটির সাত নেতা-কর্মীর দুই বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও সাত মাস কারাভোগের আদেশ দেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- সাজেদুল ইসলাম সুমন, গাণ্ডু শাহীন, বেল্লাল হোসেন, জাকির হোসেন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও আবু বক্কর সিদ্দিক। রায় ঘোষণার আগে কারাগার থেকে নিরবকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। অপর ছয় আসামি পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের মে মাসে বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে নাশকতার অভিযোগে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে পুলিশ।

পল্টন থানার মামলায় বিএনপির ২৫ নেতা-কর্মীর কারাদণ্ড : পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পল্টন থানার মামলায় যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিএনপির ২৫ নেতা-কর্মীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেকের ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাস করে কারাভোগের আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ। অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি আকরামুল হাসান মিন্টু, হাবিবুর রশিদ হাবিব ও যুবদল দক্ষিণের সভাপতি এনামুল হক এনাম।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয়ে ফেনী যাওয়ার কথা ছিল। তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গেলে আসামিরা পুলিশের কাজে বাধা দেন। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা।

বংশাল থানার মামলায় বিএনপির ৬২ নেতা-কর্মীর কারাদণ্ড : ২০১৮ সালের রাজধানীর বংশালে পুলিশের ওপর হামলা ও দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার মামলায় বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খন্দকার আখতার হামিদ খান পবনসহ ৬২ নেতা-কর্মীকে সাড়ে তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী আসামিদের অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে বংশালের নবাব কাটরায় বিএনপির একদল নেতা-কর্মী জড়ো হন। এক পর্যায়ে তারা দোকানপাট ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা এবং দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়।

রংপুরে পাঁচজনের ১০ বছরের কারাদণ্ড : নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর জানান, ১০ বছর আগের নাশকতা মামলায় জেলা ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ও যুবদল নেতাসহ পাঁচজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালতের বিচারক। গতকাল দুপুরে রংপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক কৃষ্ণ কান্ত রায় এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন উপস্থিত ছিলেন। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহির আলম নয়ন, জেলা যুবদলের সহসভাপতি তারেক হাসান সোহাগ ও যুবদল কর্মী আরিফ হোসেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, হরতালে নাশকতা সৃষ্টির জন্য বিস্ফোরক দ্রব্যসহ আলোচনা করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের ১৯ মে রাত ১১টায় রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ সাত আসামিকে গ্রেফতারসহ ৫৬টি পটকা বোমা উদ্ধার করে।

সর্বশেষ খবর