মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তদবিরকারীর ভিড় কমেছে সচিবালয়ে

স্বস্তিতে নিয়মিত কাজে ব্যস্ত কর্মকর্তারা

ওয়াজেদ হীরা

জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের পর থেকে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কমেছে তদবিরকারীর ভিড়। তদবির নিয়ে আসা দর্শনার্থী কম থাকায় সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তরাও স্বস্তিতে নিয়মিত কাজ সারছেন। সরকারের নিয়মিত কাজের বাইরে যেহেতু বড় কোনো কাজ, বদলি-পদোন্নতির সুযোগ কম সে কারণে ভিড় কমতে পারে বলে মনে করছেন সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। কেউ কেউ বলছেন সচিবালয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরই ভিড় বেশি থাকে। তারা এখন নির্বাচনে ব্যস্ত থাকায় সচিবালয়ে ভিড় কমেছে।

সাধারণত সোমবার ছাড়া প্রতিদিন নির্দিষ্ট পাস নিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে দর্শনার্থী প্রবেশ করেন সচিবালয়ে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষ প্রবেশ করত। সেই সংখ্যা এখন সর্বোচ্চ ১ হাজারের মতো। সচিবালয়ে কর্মরতরা জানান, যারা দর্শনার্থী পাস নিয়ে প্রবেশ করেন তার অধিকাংশই কোনো না কোনো তদবির নিয়ে আসেন। ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর অফিস চলাকালে কয়েকটি দিন ঘুরে দেখা যায় এক অচেনা সচিবালয়। যেখানে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বা মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থী খুবই কম। কারণ মন্ত্রীরাও এখন খুব জরুরি কাজ ছাড়া সচিবালয়ে যাচ্ছেন না। সবার ভিড় এখন ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। তফসিল ঘোষণার আগে বেলা ১১টার পর থেকে সচিবালয়ের প্রবেশ বুথে লম্বা লাইন লেগে থাকত। এখন হাতেগোনা দর্শনার্থী। যারা আসছেন তার বেশির ভাগই সচিবালয়ের বাইরে অবস্থিত দফতর বা অধিদফতরের সরকারি কর্মকর্তা বা কোনো প্রাইভেট কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এখনকার দর্শনার্থীর প্রায় সবাই বিভিন্ন মিটিংয়ে সচিবালয়ে আসছেন। সচিবালয়ের ভিতরে গাড়ির সংখ্যাও কমে গেছে।

৬ নম্বর ভবনের লিফটম্যান মনির বলেন, কয়েকদিন যাবৎ কোনো লিফটের সামনেই ভিড় নেই। দর্শনার্থী এখন আসছে কম। লিফট সুপারভাইজার মজিবুর রহমান বলেন, সচিবালয়ে নিয়মিত কর্মকর্তা থাকলেও একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগার কারণ হচ্ছে অন্য সময়ের চেয়ে দর্শনার্থী কমেছে। নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ততার কারণেও দর্শনার্থী কমতে পারে। অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি, ভূমি, খাদ্য, দুর্যোগ ও ত্রাণ, সড়ক পরিবহন ও সেতুসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে দেখা গেছে। অন্য সময় তদবিরের চাপে অনেক কর্মকর্তার রুমে প্রবেশ করার সুযোগ পাওয়া যেত না। দর্শনার্থী না থাকায় এত দিন জমে থাকা কাজ শেষ করতে কর্মকর্তাদের ব্যস্ত দেখা গেছে। সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন প্রায় সব মন্ত্রীই অফিসে কম আসছেন। তাঁরা নির্বাচন নিয়ে মাঠে আছেন। সাধারণত তদবির নিয়ে যারা আসেন তারা রাজনৈতিক ব্যক্তি, মন্ত্রীদের কাছে আসেন। যেহেতু মন্ত্রীরা এখন অফিসে কম আসেন সে কারণে তদবিরকারীর উপস্থিতিও কমেছে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সচিবালয় নিরাপত্তা শাখা) শাহে এলিদ মাইনুল আমিন বলেন, ‘আগে হয়তো গড়ে আড়াই থেকে ৩ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করত সেখানে এখন ১ হাজার প্রবেশ করছে। যেহেতু প্রতিদিনই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাইরের দফতরের সঙ্গে মিটিং থাকে। তবে সাধারণ দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম থাকলেও সচিবালয়ের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি নেই বরং হরতাল-অবরোধের মধ্যেও নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও বেশি। সচিবালয় নিরাপত্তা শাখার উপপুলিশ কমিশনার মোমতাজুল এহসান আহম্মেদ জানান, সচিবালয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এখানে দর্শনার্থী কমবেশির সঙ্গে সম্পর্ক নেই। সাধারণ উপস্থিতি কম হলেও সচিবালয়ের কর্মকর্তরা আছেন, অনেক সময় বিদেশিরাও আসেন। ফলে এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থায় সব সময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হয়।

সর্বশেষ খবর