বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

মানুষ পুড়িয়ে হত্যায় কিছুই অর্জন করা যায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানুষ পুড়িয়ে হত্যায় কিছুই অর্জন করা যায় না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান -পিআইডি

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করে, তারা অমানবিক। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে কিছুই অর্জন করা যায় না, এটা অন্যায়।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসে গতকাল বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে স্বাগত জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যান। সেখানে তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সকালে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে ‘মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান’ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জানি না, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মেরে... কেন মারে সেটিই আমার কাছে প্রশ্ন। আর এই যে সাধারণ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারা, বাসে আগুন দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা, এটি কী কারণে, তা আমার কাছে এখনো বোধগম্য না। তিনি বলেন, আমরা একটির পর একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি। যেমন, কভিড-১৯ আমরা মোকাবিলা করলাম। এ ছাড়া অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঝামেলা মাঝে মাঝে শুরু হয়।

শান্তি চান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শান্তি চাই। শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, আঞ্চলিকভাবে এবং সারা বিশ্বে শান্তি চাই। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত সুস্পষ্ট- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তির দেশ, মানুষ যখন একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, মানুষ একটু আশার আলো দেখছিল, সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সে সময় অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল ও অবরোধ মানুষের জীবনকে আবার ব্যাহত করছে, শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে, এটিই হলো সবচেয়ে কষ্টের বিষয়। তিনি বলেন, এটিই চাই, যারা এগুলো করছে অন্তত তাদের একটু আক্কেল-ঠিকানা আসুক। এভাবে ধ্বংসাত্মক কাজ না করে গণতান্ত্রিক ধারায় যোগ দিক, জনগণের ওপর আস্থা রাখুক, বিশ্বাস রাখুক। দেশকে আরও এগিয়ে নিতে চান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারানোরও কিছু নেই, পাওয়ারও কিছু নেই। বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। এ বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে ২০২৬ সালে। ২৬ সালে এ যাত্রা যেন ভালোভাবে করতে পারি। ইতোমধ্যে আমরা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা কেউ যেন বন্ধ করতে না পারে সেটিই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সশস্ত্র বাহিনীকে সবসময় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। কিন্তু আমার দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যেন যথাযথ প্রস্তুতি আমাদের থাকে, তা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা প্রস্তুত অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিতে সমরে সব জায়গায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সদা সচেষ্ট এবং শক্তিশালী। তাদের শক্তিশালী হিসেবে আমরা গড়ে তুলছি। সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যে কোনো দুর্যোগ দেখা দিলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো কিছু অর্জন করতে হলে জনগণের শক্তির প্রয়োজন। সে জন্য অগ্নিসন্ত্রাসের পথ পরিহার করে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করার এবং তাদের পাশে থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, জনগণের অকল্যাণ করে, তাদের পুড়িয়ে মেরে কিছু অর্জন করা যায় না, অন্তত এই বিষয়টা এগুলো যারা করছে তারা যেন বুঝতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে লাখো বাঙালি স্বাধীনতার জন্য নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সেই স্লোগানও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যে ৭ মার্চের ভাষণ দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল, সেই ভাষণও নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ সেই ভাষণ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্থান পেয়েছে। আড়াই হাজার বছরে সামরিক-বেসামরিক নেতারা যত ভাষণ দিয়েছে, জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, এটুকু আমরা করতে পেরেছি।

সরকারপ্রধান বলেন, নতুন প্রজন্মকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বীরত্বের ইতিহাস জানানো দরকার। স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই আজ আমরা নিজেদের পরিচয় দিতে পারি। কিন্তু একসময় সেটা পারিনি। এখন আমাদের স্বাধীন দেশে আমরা স্বাধীনভাবে চলতে পারি। তিনি বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শুধু দেশে নয়, বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে অনেকে জীবন দিয়েছেন। তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর