বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে মাঠে নতুন জোট

এক দফা ছেড়ে নির্বাচনমুখী কল্যাণ পার্টির ইবরাহিম তিনটি নিবন্ধিত দল নিয়ে নতুন জোট যুক্তফ্রন্ট সৈয়দ ইবরাহিম বিশ্বাসঘাতক : ১২-দলীয় জোট

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা ১২-দলীয় জোটের সঙ্গ ছেড়ে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। আর সেই লক্ষ্যে তিনটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।

গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন জোট গঠন করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনিই এ নতুন জোটের সভাপতি। যুক্তফ্রন্টের বাকি দুই দল হলো বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন)। এর মধ্যে বাংলাদেশ মুসলিম লীগও ছিল ১২-দলীয় জোটের সঙ্গী। সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে যুক্তফ্রন্টের। জোটের প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, মহাসচিব তফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাসচিব ফারক-উল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইকবাল হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ‘এক দফা’ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন থেকে বেরিয়ে হঠাৎ ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সৈয়দ ইবরাহিমকে বিশ্বাসঘাতক ও বেইমান আখ্যা দিয়ে ১২-দলীয় জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট গঠনের ঘোষণার পরই ১২-দলীয় জোটের শীর্ষ পর্যায়ের এক জরুরি সভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীকে জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়। সভায় নেতারা অভিযোগ করেন, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বহুমাত্রিক রূপ ধারণ করে আন্দোলনের নামে সরকারি সুবিধা গ্রহণ করেছেন। অবৈধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশ, মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। সভায় সৈয়দ ইবরাহিমের স্থলে ১২-দলীয় জোটের নতুন মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে। জোটের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা কারাগারে বন্দি থাকায় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধানকে জোটের সমন্বয়ক করা হয়। ১২-দলীয় জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক রাশেদ প্রধানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, “আন্দোলন ছেড়ে ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমাকে ‘মীরজাফর’ বলা হতে পারে, তা আমি জানি। ঝুঁকি মেনেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ আমরা চাই, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য’ হোক। আমাদের এই সিদ্ধান্ত কারও পছন্দ হবে, কারও হবে না। এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার অধিকার সবারই থাকবে। তবে আমার আবেদন থাকবে, পরিস্থিতি-পরিবেশকে পূর্ণাঙ্গভাবে মূল্যায়ন করে মন্তব্য করবেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী কিছু সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিকভাবে সংকটময়। এ সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের উত্তরণ ইনশা আল্লাহ ঘটবে।” সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমরা তিনটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক মিলে আজকে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছি। জনগণের দয়া, আপনাদের সহযোগিতা, সর্বোপরি আল্লাহর রহমত থাকলে সাফল্য আসবে। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তফ্রন্ট এখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেব। আমরা তার জন্য বড় ঝুঁকি নিচ্ছি। আমরা অনেক বড় দল নই, ছোট দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেব আশঙ্কা নিয়েই। আশঙ্কার উত্তর হচ্ছে সরকারের ওয়াদা; এবার ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনকে জাতির সামনে, বিশ্বের সামনে গ্রহণযোগ্য করতে চাই।’

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির (ওয়ান-ইলেভেনের) পর জরুরি অবস্থার মধ্যে ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’ স্লোগান সামনে রেখে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আবির্ভাব হয়। যুক্তফ্রন্ট গঠনের আগে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং সর্বশেষ জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২-দলীয় জোটে ছিলেন। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিল কল্যাণ পার্টি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর