শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় শেখ হাসিনা

নির্বাচনে আসেন, জনগণ কাকে চায় যাচাই করি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনে আসেন, জনগণ কাকে চায় যাচাই করি

বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে আসেন, জনগণ কাকে চায় আমরা যাচাই করে দেখি।

গতকাল সকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গতকাল রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। আজ সকালে বৈঠক আবার বসবে। যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন, তাদের বলব, আপনারা আসেন নির্বাচনে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। জনগণের ভোট আমাদের চুরি করা লাগবে না। জনগণের প্রতি বিশ্বাস আমাদের আছে। আওয়ামী লীগের আমলে প্রতিটি নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে আমরা নির্বাচন করি। এবার আমি বারবার নির্দেশনা দিয়েছি, আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে, সেটাই আমরা চাই। নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা কেউ করবেন না। সেটা করলে তার পরিণতি ভালো হবে না। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের ভোটের অধিকার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নেবেন। যাকে খুশি তাকে ভোট দিন, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নেই। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমার আহ্বান থাকবে, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিন।

নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে থাকা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করতে আওয়ামী লীগ সরকার আইন করে দিয়েছে। নির্বাচন আবার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার জন্য আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করেছে। অবাধ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু করতে ৮২টি সংশোধন আনা হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যারা কথা বলেন তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে আমার প্রশ্ন- যেভাবে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে, নির্বাচন কলুষিত করেছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে তখন কোথায় ছিল তারা? তখন তো তাদের কাছ থেকে কোনো কথা শুনিনি! তিনি বলেন, জিয়া ও এরশাদের সময় প্রতিটা নির্বাচন আমরা দেখেছি, ভোট কারচুপির খেলা। ’৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে কোনো ভোট পড়েনি বলতে গেলে। ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া নিজেকে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এ ভোটচোরকে মেনে নেয়নি। আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সবার মনে রাখা উচিত, খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ ভোট চুরির কারণে পদত্যাগ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যতবার এসেছে, জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ক্ষমতা জনগণের হাতে চলে এসেছে। ২০১৪ সালে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসযজ্ঞ করে তারা নির্বাচনে আসেনি। নির্বাচনে না আসার একটিই কারণ, তাদের আত্মবিশ্বাস নেই। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এসে তারা একটা পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে যায় এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে অপপ্রচার চালায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ একটা দৃষ্টান্তও দেখাতে পারেনি কোথায় কী অনিয়ম। যদি কিছু দৃষ্টান্ত দেখাতে পারত, তাহলে কিছু কথা ছিল। আবার দেখলাম তারা সরকার উৎখাত করবে, সেজন্য আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর সন্ত্রাস করে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আক্রমণ করে, মানুষ মেরে সরকারের পতন ঘটাতে চায় তারা। রাজনীতি যদি মানুষের জন্য হয়, তাহলে সরকারে যাওয়া যায়। কিন্তু তারা যে কাজগুলো করে যাচ্ছে, তা জনগণ মেনে নেয়নি। ছাত্রছাত্রীরা আজ পরীক্ষা দিতে পারছে না। হরতালের কারণে স্কুলে যেতে পারছে না। আগুন দিয়ে বিএনপি গাড়ি পোড়াচ্ছে, ট্রেন পোড়াচ্ছে, মানুষের ওপর হামলা করছে। ২৮ অক্টোবরের আগে বিএনপির সভা-সমাবেশের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তারা তো মিটিং মিছিল করে যাচ্ছে। আমরা তো বাধা দিইনি। তাহলে কেন এ অগ্নিসন্ত্রাস? যখন বিএনপি মিটিং মিছিল করছিল, ভদ্রভাবে রাজনীতি করছিল, তাদের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসছিল। এটা বাস্তব কথা যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বেড়েছিল। আস্তে আস্তে মানুষের সমর্থন পাচ্ছিল। জমায়েতও ভালো করছিল। যখন আবার সেই অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে, হামলা করেছে, তখন আবার আগের জায়গায় ফিরে গিয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছ। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই তারা আবার জনগণের সামনে চলে এসেছ। সন্ত্রাসী হিসেবে তারা আবার পরিচিতি পেয়েছে। দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ধ্বংস করার জন্য নানা প্রক্রিয়া করছে বিএনপি। রাজনৈতিকভাবে তারা পারেনি, এখন অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে চাপে ফেলবে সে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসীরা ক্ষমতায় এলে এরা দেশ আবার খুবলে খাবে, দেশ পিছিয়ে দেবে। কারণ এরা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না, চেতনায় বিশ্বাস করে না, উন্নয়নে বিশ্বাস করে না, শুধু নিজেদের ভাগ্য গড়ায় বিশ্বাস করে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হরতাল, অবরোধ, অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। কেউ আগুন দেওয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে ধরতে হবে। ধরে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে এবং পুলিশে হস্তান্তর করতে হবে। আমরা বলব না আইন আপনারা হাতে তুলে নিন। তবে এদের ধরতে হবে। পুলিশে তুলে দিতে হবে। কেউ রেহাই পাবে না। বিএনপির প্রতি বিদেশিদের সমর্থনের ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দেশ বা কোনো বড় দেশ তাদের সমর্থন দিক, তাতে কিছু যায় আসে না। আমার কাছে আমার বাংলাদেশ বড়। এর থেকে বড় আর কেউ নয়। আমি দেশের জন্য কাজ করি। কারও তাঁবেদারি করার জন্য নয়, পদলেহন করার জন্যও নয়। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীরা নির্বাচনে আসবে না। নির্বাচনে আসার জন্য তাদের আস্থা ও বিশ্বাস নেই। নির্বাচন করার মতো একটি লোকও নেই। যারা দুর্নীতিবাজ ও ২১ আগস্ট ঘটায়, তাদের নেতৃত্বে যে কোনো দল কোন বিশ্বাসে নির্বাচনে আসবে? তার পরও যদি আসে, কিছু না হোক, নির্বাচনে নমিনেশন বিক্রি করাও তো তাদের একটা ব্যবসা। এর আগেও এমন ব্যবসা করেছে, এবারও সেই ব্যবসা করতে পারে।

সর্বশেষ খবর