শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাঠ ছাড়বে না বিএনপি

► ডিসেম্বরের শুরু থেকে কঠোর কর্মসূচি ► আরও একাট্টা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত ► ২৬ ও ২৭ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ

শফিউল আলম দোলন

মাঠ ছাড়বে না বিএনপি

পরিস্থিতি পাল্টে দিতে এবার সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। কোনো কিছুতেই আর মাঠ ছাড়বে না তারা। সরকারের কোনো ধরনের দমননীতির মুখেই পিছু হটবে না দলটি। চলমান আন্দোলনের সপ্তম ধাপের টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হচ্ছে রবিবার থেকে। অষ্টম ধাপও যাবে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচিতেই। ৩০ নভেম্বরের পর শুরু হবে নবম ধাপের কর্মসূচি। ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই সারা দেশে নতুন ধাঁচের আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করতে চায় বিএনপি। হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি আরও কঠোর ও জটিল কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সঙ্গে আছে গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। এ ছাড়া এতদিন জামায়াতে ইসলামী দূর থেকে কর্মসূচি পালন করলেও আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপির সঙ্গে একাট্টা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করা হলেও এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন আরও জোরদার করবে বিএনপি। চলমান কর্মসূচিসহ আগামী দিনের আন্দোলনে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে ইতোমধ্যে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন তারেক রহমান। জানা গেছে, আপাতত চলমান আন্দোলনকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে দলটি। এরমধ্যে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা ছাড়াও ২৯ ও ৩০ নভেম্বর হরতাল কিংবা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যে কোনো সময় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। যে কোনো সময় আরও বড় ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে দলটি। পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের  ঘোষণাও আসতে পারে। অসহযোগ কর্মসূচিটা হলো- হরতাল-অবরোধ, অবস্থান, ঘেরাওসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনের যত রকমের কর্মসূচি আছে সবকিছুর সমন্বিত কর্মসূচি। আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এবার একটা আখেরি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। জীবন-মরণের জন্য প্রস্তুত। এবার জনগণ রাজপথে নেমেছে কেবলমাত্র বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়। মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এ লড়াইয়ে বিজয় না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চ রাজপথে থাকবে। হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ঘেরাও অবস্থানসহ সব ধরনের কর্মসূচিই দেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, সরকার এখন প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে বাগান সাজিয়ে একতরফা নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। এতে কোনো লাভ হবে না। সামনে কঠোর কর্মসূচি আসবে। আর কোনো খেলাই সফল হবে না। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, দাবি না মানলে সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। গায়ের জোরে আবারও একটা তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। তাদের এ একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে জনগণ জীবন-মরণ পণ করে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এ সরকারের পতন না ঘটিয়ে তারা ঘরে ফিরবে না।

 জানা গেছে, একমাত্র ‘ওয়ান-ইলেভেন’র সময় প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি সরকারের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিএনপি সমমনা দলগুলো নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরালো করছে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো দল তাদের মত পাল্টে  আওয়ামী লীগের কাফেলায় যোগ দেয় সেদিকেও তীক্ষè দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। দলের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, এবারের আন্দোলনের সফলতা নিয়ে বিএনপি হাইকমান্ড খুবই আত্মবিশ্বাসী। তাছাড়া খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি দেশের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ আসতে পারে। এরমধ্যে ছয় দফা দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে আগামী রবিবার ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। একই কর্মসূচি পালন করছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, এলডিপিসহ ৩৯টি রাজনৈতিক দলও। যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থেকে জামায়াতে ইসলামী পৃথকভাবে একই কর্মসূচি পালন করলেও এবার থেকে সরাসরি যুগপৎ কিংবা সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার এ অবরোধ কর্মসূচি পালনের জন্য দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর