শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যুদ্ধবিরতি শুরু, গাজায় মানুষের ঢল

হামাসের হাত থেকে মুক্তি পেল ২৫ বন্দি ৩৯ ফিলিস্তিনিকে ছাড়ল ইসরায়েল

প্রতিদিন ডেস্ক

যুদ্ধবিরতি শুরু, গাজায় মানুষের ঢল

যুদ্ধবিরতির আগ মুহূর্তেও একাধিক ভবনে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল -এএফপি

সাত সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গতকাল সকালে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। ফলে সকাল ৭টায়ই গাজায় ফিরতে শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। পরে ফিরতি মানুষের ঢল নামে রাস্তাঘাটে। এদিকে যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলি বিমান থেকে জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত একটি স্কুলের ওপর বোমাবর্ষণ করে ৩০ জনকে হত্যা করা হয়। পাশাপাশি গাজায় ফিরতি মানুষের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন সন্ধ্যায় হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলের ১৩ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ৩৯ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানান, ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি থাকা ৩৯ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু প্রাথমিকভাবে মুক্তি পেয়েছে। কাতারের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে দালিয়াত আল-কারমেলের দামুন কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের পশ্চিম তীরের ওফার কারাগারে স্থানান্তর করতে দেখা গেছে। রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, পার্স টুডে

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে গত রাতে জানানো হয়, তারা হামাসের হাতে থাকা ১৩ বন্দিকে ফেরত পেয়েছে। অন্যদিকে ৩৯ বন্দি ফেরত পাওয়া সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে ফিলিস্তিনি পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগের এক খবরে থাই প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হয়, গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি ১২ থাই শ্রমিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মিসরীয় স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিসরের নিবিড় প্রচেষ্টার ফলে ১২ থাই শ্রমিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে ১৩ ইসরায়েলি বন্দির কোনো সম্পর্ক নেই। হামাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

গাজার খবরে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর উত্তর গাজায় ইসরায়েলের কোনো বিমানকে আকাশে উড়তে দেখা যায়নি। ইসরায়েলের উদ্দেশ্যেও হামাস রকেট হামলা পরিচালনা করেনি। লেবাননের আল-মায়াদিন টিভি জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর গাজার কোনো এলাকায় বোমাবর্ষণের শব্দ শোনা যায়নি। আরেক খবরে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর খাদ্য ও জ্বালানি তেল বহনকারী ট্রাক মিসর থেকে রাফা ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন ৪ ট্রাক জ্বালানি ও রান্নার গ্যাস ঢোকার অনুমতি পাবে। এ ছাড়া মিসর থেকে গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন ২০০ ট্রাক ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী আনা হবে। এদিকে বন্দিবিনিময়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের জেলে থাকা ২৪ ফিলিস্তিনি নারী ও ১৫ পুরুষকে দুপুরের দিকে পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরের কাছে ওফার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, ‘ইসরায়েল যদি সব ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়, তাহলে আমরাও আমাদের হাতে থাকা ইসরায়েলি সেনাদের মুক্তি দেব।’ উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে পরিচালিত আল-কুদস তুফান অভিযানের সময় হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মধ্যে মোট ৫০ জনকে মুক্তি দেবে হামাস। পরিবর্তে ইসরায়েল কমপক্ষে ১৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। এ ছাড়া মানবিক যুদ্ধবিরতি চলাকালে এ চার দিনে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন এবং দখলদার সেনাবাহিনী গাজায় তাদের সব সামরিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখবে। দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান ও ড্রোন ওড়াও সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। আর উত্তর গাজায় সকাল ১০টা থেকে করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান ও ড্রোন ওড়তে পারবে না। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যকার এ চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে কাতার, মিসর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে ট্রাক প্রবেশ করতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রাফা ক্রসিংয়ের কর্মকর্তারা। ২৩০টি ট্রাক গতকাল গাজায় প্রবেশ করার কথা।

গাজায় স্কুলে হামলা : যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের অধিভুক্ত একটি স্কুলে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তাতে নিহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত আবু হুসেইন স্কুলে হামলায় ৩০ জনের প্রাণ গেছে। গাজার অন্যান্য অংশে সহিংসতা ও তীব্র বোমাবর্ষণ থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল ছিল এটি। এদিকে উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলার লক্ষ্য ছিল প্রধান প্রবেশপথ ও জেনারেটরগুলো। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা বলেন, হাসপাতালটি ভয়াবহ বোমা হামলার শিকার হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ থাকা বেইত লাহিয়া অঞ্চলের ওই হাসপাতালে ২ শতাধিক রোগী, চিকিৎসাকর্মী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকেরা অবস্থান করছিল। এ ছাড়া ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের শেখ নাসের অঞ্চলেও আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত ও কয়েক ডজন লোক আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা। ওয়াফা আরও জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজার শেখ রাদওয়ান অঞ্চলে একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালায়। তাতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে।

ফিরতি মানুষের ওপর গুলি : যুদ্ধবিরতিতে বাড়ি ফেরার চেষ্টাকারী ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়েছে। মিডল ইস্ট আইয়ের মাহা হুসেইনি গাজায় সরেজমিনে অবস্থান করছেন। তিনি জানান, চার দিনের যুদ্ধবিরতির সময় ফিলিস্তিনিদের বাড়ি ফিরতে বাধা দিতে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। হুসেইনি বলেন, বিরতি কার্যকর হওয়ার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর মধ্য গাজার মাগাজির পূর্বে বাড়ি ফেরায় চেষ্টারত ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গুলিবর্ষণ করেছে। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী লিফলেট বিতরণ করছে। তাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ গাজা থেকে মানুষ যেন উত্তর গাজায় না ফেরে।

সর্বশেষ খবর