শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রতারক গ্রেফতার

২০ কোটি টাকা রেডি রাখেন, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আপনার মনোনয়নের বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। আপনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন। এ জন্য দলের ফান্ডে আপনাকে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে। এই টাকা রেডি রাখবেন। যখন জমা দিতে বলা হবে তখন দেবেন। আর অল্প সময়ের মধ্যে আপনি দেখা করবেন।’

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কল দিয়ে এমন আশ্বাস দিতেন বাবা এবং মেয়ের সমন্বয়ে গড়ে তোলা একটি প্রতারক চক্র। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জন করতে তারা নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের বিভিন্ন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি এক মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ফোন করে ২০ কোটি টাকা রেডি রাখতে বলে চক্রটি। পরে ওই মনোনয়নপ্রত্যাশীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নোয়াখালী থেকে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। তারা হলেন- মো. ইয়াসিন এবং তার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, সম্প্রতি এক মনোনয়নপ্রত্যাশী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে ফোন করে প্রতারকরা এমন আশ্বাস দেয়। ২০ কোটি টাকা দাবি করায় এই মনোনয়নপ্রত্যাশী বিষয়টি দলের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে জানান। বিষয়টি প্রতারণা বুঝতে পেরে ডিবির কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। প্রতারক চক্র গণভবনের নাম ব্যবহার করে এমন প্রতারণার চেষ্টা করছে। আমরা তদন্তে নেমে সেই ফোন কল করা ব্যক্তিকে নোয়াখালী থেকে গ্রেফতার করি। গ্রেফতারকৃত বাবা এবং মেয়ে মিলে প্রতারণার উদ্দেশে চক্রটি গড়ে তুলেছেন। তারা দুজনে মিলে মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ফোন করেন। সে সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করতেন। গ্রেফতারের পর তাদের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের রেকর্ড পাওয়া গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান আরও বলেন, একেক সময়ে প্রতারণার একেকটি মৌসুম থাকে। আগে চাকরি, পোস্টিং, বিদেশে লোক পাঠানোসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে অনেককে সর্বস্বান্ত করেছে। বর্তমানে চলছে মনোনয়ন প্রতারণা। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরেই নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। যেহেতু অনেক মানুষ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন কিনেছেন, প্রতারকরা এটাকে ঘিরে প্রার্থীদের ফোন করে নমিনেশন পাবেন জানিয়ে ফান্ডে টাকা দিতে বলে। অনেকেই তাদের ফাঁদে পা দিয়ে কিছু টাকাও দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ টাকা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা টাকা না দিয়ে ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, আমরা তখন প্রতারকদের গ্রেফতার করছি। তাদের রিমান্ডে এনে এই চক্রে অন্য যারা জড়িত তা জানার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণা করার কৌশল বিষয়েও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রতারকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নামে নম্বর ট্রু-কলারে সেভ করে বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করে। কিন্তু যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ একজন প্রার্থীকে নমিনেশন দেওয়ার আগে কয়েকটি ধাপে যাচাই-বাছাই করা হয়। ট্রু-কলারে নাম সেভ করা দেখে কল পেলেই টাকা দিয়ে নমিনেশন পাবেন, এটা এত সহজ নয়। তাদের সাবধান হতে হবে।

সর্বশেষ খবর