রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

টানটান উত্তেজনায় অপেক্ষা

সকালে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেখ হাসিনার বিকালে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা

রফিকুল ইসলাম রনি

টানটান উত্তেজনায় অপেক্ষা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত তিন দিনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। টানটান উত্তেজনায় অপেক্ষায় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

আজ বিকাল সাড়ে ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অথবা ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটযুদ্ধের ময়দানে নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশায় আওয়ামী লীগের বাগানে ফুটে ওঠা ৩ হাজার ৩৬২টি ফুলের মধ্য থেকে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে সুন্দর ও সুগন্ধি কোন ৩০০ ফুল বেছে নিয়েছেন প্রার্থীদের পাশাপাশি দেশবাসীর দৃষ্টিও সেদিকে।

সারা দেশের ৩০০ আসনে দলের একক প্রার্থিতা ঘোষণার আগে আজ সকাল ১০টায় দলীয় ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন।

একই সঙ্গে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দল যাঁদের মনোনয়ন দিয়েছে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁদের বিজয়ী করার প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিতে পারেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, সবদিক বিবেচনায় নিয়েই ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এতে বিভিন্ন আসনে নতুন মুখ যেমন এসেছেন, তেমনি বাদও পড়েছেন অনেক হেভিওয়েট এমপি-মন্ত্রী ও  পুরনো বিতর্কিতরা। তবে জনগণের ভোটে বিজয়ী হতে পারবেন এমন প্রার্থীদের কাউকেই বাদ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে দলের বিভিন্ন সূত্র।

গত তিন দিনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হলেও কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু গণমাধ্যমে কিছু প্রার্থীর নাম প্রকাশ এবং নানা সূত্রে পাওয়া ‘হাওয়া’ খবরে তাদের কর্মী-সমর্থকরা মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লেখার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন। এত কিছুর পরও ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু নিশ্চিত নয়। চূড়ান্ত হওয়ার পরও প্রার্থী বদল করার অতীত নজির রয়েছে। সে কারণে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা চতুর্থ দিনের মতো গতকাল রাতে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় বাকি থাকা চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সব আসনের দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। টানা এই চার দিনের বৈঠকের মাধ্যমে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।

শেষ দিন শনিবারের বৈঠকেও চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি আসনে বর্তমান এমপি, হেভিওয়েট মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে সেখানে নতুন মুখ আনা হয়েছে। তবে কাদের কপাল পুড়ল এ ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ডের কোনো সদস্য বলতে রাজি হননি। তবে এটুকু আভাস দিয়েছেন, বিগত ছয়টি বিভাগের মতো বাকি দুই বিভাগের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে অধিক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ আসনে দলের একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হলেও সবাই যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন তা নয়। জোট-মহাজোটের হিসাবের অঙ্কে সমঝোতা হলে যেসব আসন শরিক ও মিত্র দলগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হবে, সেসব আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সে কারণেই চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে দলের প্রধান শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত নৌকা প্রতীক বরাদ্দের চিঠির সঙ্গে দলীয় মনোনীত সব প্রার্থীর কাছ থেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের একটি করে চিঠিও নেওয়া হতে পারে। যাতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোনো প্রার্থীই বিদ্রোহ করে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারেন।

জানা গেছে, আজ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হলে কাল বা পরশু ১৪ দলীয় জোট নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। যেখানে জোটের নেতাদের ছাড় দেওয়া হবে সেখানে নৌকার প্রার্থী নাও রাখা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট দলের সাংগঠনিক অবস্থা এবং প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি কোনো আসন ছাড়া হলে সেখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের জোটের পরিধি বাড়তে পারে এবং সেক্ষেত্রে দলীয় বা জোটের মনোনয়নও ভিন্নতর হবে। বিএনপি এলে জোট-মহাজোট গঠন করে শক্তিশালী প্রার্থীদের রেখে দুর্বল প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা হবে। আর শেষ পর্যন্ত বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা নির্বাচনে না এলে বিগত নির্বাচনগুলোর মতো জোট-মহাজোটের পথে না গিয়ে সবাইকে এককভাবে নির্বাচনে নামাতে চায় আওয়ামী লীগ। এতে যেমন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, তেমনি জনপ্রিয় নেতারাই নিজ নিজ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও শনিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজন না হলে জোটের দিকে যাবে না আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান। আমরা শরিকদের বিষয়ে এখনো কিছু ঠিক করিনি। কারণ জোটের বিপরীতে জোট হয়। আমাদের প্রতিপক্ষের যদি একটা বড় জোট হয়, সেটার বিপরীতে আমাদেরও জোট হবে। তাছাড়া আমরা কেন অহেতুক জোট করতে যাব? প্রয়োজন না থাকলে জোট করব না। জোট করব যাদের নিয়ে মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর