রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুখ থুবড়ে পড়বে অর্থনীতি

----- মাহবুবুল আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুখ থুবড়ে পড়বে অর্থনীতি

অব্যাহত হরতাল-অবরোধ ও ধংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হলে আগামী তিন থেকে ছয় মাসে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, হরতাল-অবরোধে বিদেশিদের  কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে এক দিনের হরতাল বা অবরোধে দেশের ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবের পর উদ্যোক্তারা রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সহ্য করতে পারছেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অসম্ভব এবং নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়ে জনগণের কল্যাণ আসবে না।

অবরোধ ও হরতালের রাজনীতি পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের বিক্ষোভের দিনে অর্থনীতিতে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হয়। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন চাই। হরতাল বা অবরোধে প্রতিদিন সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। তাই আমরা দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চাই। আমরা ধর্মঘট বা অবরোধ চাই না। ধর্মঘট বা অবরোধ অর্থনীতির জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড মহাসড়কে সহিংসতা সৃষ্টি করছে; যা বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ প্রক্রিয়া বিঘিœত হওয়ায় এবং পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ বেশি দামে পণ্য কিনছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা তাদের আগের কেনা পণ্য সময়মতো পাচ্ছেন না। সরবরাহকারী ও পণ্য উৎপাদনকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হরতাল ও অবরোধের কারণে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মাহবুবুল আলম বলেন, আসন্ন রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে এলসি খোলার জন্য ডলার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ এবং রমজান পর্যন্ত শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য আমদানিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবের পর উদ্যোক্তারা রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সহ্য করতে পারছেন না।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অসম্ভব। নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়ে জনগণের কল্যাণ আসবে না। বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ এবং বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাপক প্রচেষ্টায় এখানে বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। দেশের অভ্যন্তরীণ অঙ্গনে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বিদেশি ক্রেতাদের নেতিবাচক সংকেত দেবে। সে ক্ষেত্রে রপ্তানি আয় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা শিল্প খাতের টিকে থাকার পাশাপাশি তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য অপরিহার্য। তাই সরকার ও বিরোধী দলকে রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে হরতাল-অবরোধের পরিবর্তে বিকল্প কর্মসূচি নির্ধারণ করার পরামর্শ দেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

সর্বশেষ খবর