রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হরতাল-অবরোধে উৎপাদন ব্যাহত

------ মোহাম্মদ হাতেম

নিজস্ব প্রতিবেদক

হরতাল-অবরোধে উৎপাদন ব্যাহত

হরতাল অবরোধের কারণে উৎপাদন ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড  এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে পোশাক রপ্তানি। কারণ সময়মতো পণ্য না দিতে পারলে আমাদের থেকে বায়াররা মুখ ফিরিয়ে অন্য দেশে চলে যাবে। পরবর্তীতে বায়াররা আবার এখানে আসবে কি না তাও বলা যায় না। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘বিকেএমইএ’ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এসব আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমাদের সব কারখানা তো এক জায়গায় নয়। কোনো কারখানায় সুতা তৈরি হয় কোথাও ডায়িং হয় কোথাও প্রিন্টিং হয়। দেখা যায় ডায়িং ফ্যাক্টরি নারায়ণগঞ্জ আর প্রিন্টিং ফ্যাক্টরি গাজীপুরে আবার ফিনিশিং ফ্যাক্টরি সাভারে। বিভিন্ন জায়গায় কারখানার অবস্থান থাকায় আমাদের ইন্টারনাল মুভমেন্টে সমস্যা হচ্ছে। উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় ব্যাহত হচ্ছে। বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে গাড়ি ভাড়া বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় মালামাল পরিবহনে হাতেগোনা কিছু গাড়ি পাওয়া গেলেও ভাড়া গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি। গত মাসেও ঢাকা থেকে রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর পাঠাতে প্রতিটি কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ছিল ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা। হরতাল-অবরোধের কারণে সেই ভাড়া দিতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ঢাকা শহরের অভ্যন্তরেও ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ। একই দূরত্বে আগের তুলনায় বেশি গুনতে হচ্ছে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ক্ষেত্র বিশেষে ভাড়া বেড়েছে ২০-৩০ শতাংশ। তাই ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা হরতাল, অবরোধ ও সহিংস কোনো কর্মসূচি চায় না বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও অর্থনীতির বৃহৎ স্বার্থের কথা বিবেচনা করে হরতাল-অবরোধের মতো অসহিষ্ণু কর্মসূচি থেকে রাজনৈতিক দলগুলো ফিরে আসবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

পোশাক ও উৎপাদন এবং রপ্তানিকারকদের সংগঠনের এ নেতা আরও বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে অনেক ক্ষেত্রে বায়ারদের যথাসময়ে পণ্য দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্ডারগুলো ঠিক সময়ে উৎপাদন ও রপ্তানি করা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। এতে অনেক বায়াররা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, এমনিতেই বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ডলার-সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্য ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে আমদানি কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এসব কারণে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। এরই মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, যা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরও নাজুক করে তুলছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই হরতাল, অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শঙ্কার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা চান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কারণ, এটা ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

সর্বশেষ খবর