রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আচরণবিধি লঙ্ঘন অপরাধ অনুসন্ধানে ৩০০ কমিটি

ভোটের আগে-পরে পাঁচ দিন মাঠে থাকবেন ৬৫৩ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করার জন্য ভোটের আগে-পরে মোট পাঁচ দিনের জন্য মাঠে থাকবেন ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এদিকে সংসদ নির্বাচনপূর্ব অনিয়মের তদন্ত করতে ৩০০ বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান কমিটি নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ ২৬ নভেম্বর থেকেই তারা কাজ করবেন। প্রতি জেলার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং সিনিয়র সহকারী জজদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইসির আইন শাখার উপসচিব মো. আবদুছ সালামের ২৩ নভেম্বর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে বিষয়টি জানা গেছে। নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি গঠনের এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি  অপরাধ, আচরণবিধি, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি বা পরিচালনা বাধাগ্রস্ত বা ব্যাহত করে এমন নির্বাচনপূর্ব অনিয়মসংক্রান্ত বিষয় অনুসন্ধানপূর্বক কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৩০০ নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি করা হলো। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩০০ আসনের জন্য ৩০০ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে ইসি।

নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম সংঘটিত হলে তা অনুসন্ধান করে সেই প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে পাঠাবে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিসার ওই অনুসন্ধান প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে পাঠাবেন। এরপর তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি দায়িত্ব পালনকালে একজন বেঞ্চ সহকারী/স্টেনোগ্রাফার/অফিস সহকারীকে সহকারী হিসেবে সঙ্গে নিতে পারবে।

এদিকে কমিটির কর্মকর্তাদের চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুসারে সার্বক্ষণিকভাবে জিপ গাড়ি বা মাইক্রোবাস বা স্পিডবোট এবং ক্ষেত্রমতে প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহের জন্য সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। একই সঙ্গে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকালে নিরাপত্তার স্বার্থে অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর দুজন অস্ত্রধারী সদস্যকে নিয়োগ করার জন্য সব পুলিশ কমিশনার/পুলিশ সুপারকেও নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।

ভোটের আগে-পরে পাঁচ দিন মাঠে থাকবেন ৬৫৩ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করার জন্য ভোটের আগে-পরে মোট পাঁচ দিনের জন্য মাঠে থাকবেন ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। গতকাল নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন শাখার যুগ্মসচিব মো. মাহবুবার রহমান সরকার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৬৫৩ জন। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিকুইজিশন দিয়েছি। তারা কাজ করবেন পাঁচ দিন। ভোটের আগে দুই দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরে আরও দুই দিন। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী অপরাধ আমলে নিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট পেপার ধ্বংস করা, ব্যালট বক্স ছিনতাই, ভোটদানে বাধা দেওয়া বা বাধ্য করা, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ভোটের উপযোগী না রাখা এসব অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার করতে পারবেন। এ দন্ডগুলো একটু বেশি, তিন থেকে সাত বছর আছে।

৩০০ নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির বিষয়ে ইসির এই যুগ্মসচিব বলেন, জুডিশিয়াল অফিসার নিয়োগ হয়েছে নির্বাচনি তদন্ত কমিটিতে। গত সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন নিয়ে তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে তারা তদন্ত করে শুধু রিপোর্ট দিতে পারবেন। কমিশন যদি বলে একটা অভিযোগ পাওয়া গেছে, আপনারা রিপোর্ট দেবেন। তারা তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন। কমিশন তা পর্যালোচনা করে প্রার্থী, ব্যক্তি বা দলকে দন্ড দিতে পারে। এ কমিটির ফলে আচরণবিধি লঙ্ঘন কমবে। তিনি আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিটি ছিল ১২২টি। এবার ৩০০ আসনে ৩০০টি। আগে বিচারিক কর্মকর্তা যারা আসতেন, তারা বিচারিক অফিসও করতেন। এবার কমিশনের অনুরোধে সুপ্রিম কোর্ট তাদের ফুলটাইমের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। সব সময় এ কাজই করবেন। আশা করি বিধি লঙ্ঘন হলে তারা আইনানুগভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তারা অলরেডি মাঠে আছেন। ফুল ফেজে কাজ করবেন রবিবার ২৬ নভেম্বর থেকে। বাড়তি কর্মকর্তা নিয়োগের কারণ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে দেখা যেত মাঠে সব সময় তাদের পাওয়া যায় না, আলাদতের কাজ শেষ করে এটার জন্য এক্সট্রা কাজ করতেন। তাই এবার ৩০০ করা হয়েছে এবং তাদের ফুলটাইম ডিউটি এখানেই করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী সোমবার থেকে তিন দিন তাদের ট্রেনিং হবে। প্রতিদিন ১০০ জন করে থাকবেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোট গ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি রবিবার।

সর্বশেষ খবর