মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাতানো ভোট করে সরকার টিকবে না

নিতাই রায় চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাতানো ভোট করে সরকার টিকবে না

ক্ষমতাসীন সরকার অতীতের মতো পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে এবার আর টিকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের যে ভয়াবহ অবস্থা তারা করেছে- তাতে পরিবর্তন অপরিহার্য। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার, মামলা-হামলা, লুটপাট, অন্যায়-অত্যাচার, দখলবাজিসহ সর্বক্ষেত্রে আজ যে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। এ জন্য তাদের একদিন অবশ্যই এই দেশের মালিক জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বলেন, কখন যে কীভাবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে যাবে তা কেউ বলতে পারে না। অতএব সরকারের উচিত প্রহসনের নির্বাচনের চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে জনদাবি মেনে নিয়ে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ভার্চুয়ালি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, নির্বাচন, অর্থনীতি ও বিচারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

সুপ্রিম কোর্টের এই সিনিয়র আইনজীবী বলেন, দেশের বর্তমান উত্তাল বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীন সরকারই সম্পূর্ণভাবে দায়ী। অনেক স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা নিয়েই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একদিন আমরা এই দেশটা স্বাধীন করেছিলাম। আশা ছিল মানুষের ভোটাধিকারসহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু তার পরিবর্তে দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে নিছক দলীয় স্বার্থে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোটাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্র্রে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নিজেদের দলীয় স্বার্থ আর ক্ষমতালিপ্সুতার কারণে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়েছে। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কখনোই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না। ভোটারবিহীন নির্বাচনী ব্যবস্থায় তাদের আস্থা। অবশ্য তারা জানেন যে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে তারা কখনোই জয়ী হতে পারবে না। এ জন্য তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে ভয় পায়। তারা চায় না বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। বরং তাদের অবৈধ ক্ষমতার পথ পরিষ্কার করতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। সারা দেশে ৪০ লাখেরও বেশি নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়েছে। এখন আবার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গণহারে সাজা দিচ্ছে। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মতো ব্যক্তিকে একটা ঠুনকো মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রেখেছে। তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগটা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। জনগণের বিপুল পরিমাণের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। ফলে এখন এলসি করার জন্য ডলার সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দেশের এই কঠিন অবস্থায় তারা বুঝতে পেরেছে যে, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আর কখনোই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এ জন্যই তারা ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো আরেকটা পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। যা মূলত কোনো নির্বাচনই নয়। নির্বাচনের নামে মানুষের সঙ্গে প্রহসন আর একটা একতরফা নির্বাচনী খেলা মাত্র। কিন্তু এবার আর সে ধরনের কোনো নির্বাচন তারা করতে পারবে বলে আমি মনে করি না। জনগণ সেটা কখনোই মেনে নেবে না। তাছাড়া গণতন্ত্রকামী বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও প্রতিষ্ঠানই এবার বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায়। এ ছাড়া ৭ জানুয়ারি এখনো অনেক দেরি আছে। এর মধ্যেও তো অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও কারাবন্দি করে খালি মাঠে নির্বাচন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু এতে আর এবার কাজ হবে না। কারণ সারা দেশে জনগণ এবার জাগ্রত হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলই এবার রাজপথে নেমেছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা এখন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে কর্মীরাই দলের নেতৃত্ব দেবেন, তবুও আন্দোলন বন্ধ হবে না।

সর্বশেষ খবর