মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনগণের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই

মাহবুবউদ্দিন খোকন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একতরফা যে নির্বাচনের আয়োজন করছে তার প্রতি বাংলাদেশের জনগণের বিন্দুমাত্র আগ্রহ বা উৎসাহ নেই। অথচ তারা নিজেরা নিজেরাই মনোনয়ন প্রক্রিয়াও সেরে ফেলেছে। এ নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য প্রত্যেক আসনে আবার ‘ডামি ক্যান্ডিডেট’ দেওয়ার কথাও বলেছেন আওয়ামী লীগপ্রধান। এরকম একটা বৃহৎ দলের প্রধানের মুখ থেকে যদি ডামি ক্যান্ডিডেট দেওয়ার কথা বলা হয়- তাতেই পরিষ্কার বোঝা যায় যে নির্বাচনে কারা প্রার্থী হচ্ছেন- আর কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিশিষ্ট এই আইনজীবী বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে বলে আমি মনে করি না। তারপরও যদি আওয়ামী লীগ জোর করে ভোট করে ফেলতে চায়, তাহলে জনগণ এবার তাদেরকে জোর করেই ক্ষমতা থেকে নামাবে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা এবং নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ভার্চুয়ালি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পেছনে পেছনে ঘুরছে জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। অথচ বিরোধী দলের দায়িত্ব হলো রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। বিরোধী দলের আসন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর পেছনে ঘোরাঘুারি করা নয়। কাজেই এতে আরও পরিষ্কার বোঝা যায় যে, কোন্ ধরনের নির্বাচনটা তারা এবার করতে যাচ্ছেন। কিন্তু এবার আর দেশের জনগণ তাদের এই প্রহসনের নির্বাচন করতে দেবে না।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, আওয়ামী লীগের মতো একটা পুরনো ও বড় রাজনৈতিক দল গত পনেরো বছরে দেউলিয়া হয়ে গেছে। বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ভয়াবহ রকমের দমননীতি চালাচ্ছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্বাচনের মতো আরেকটা নামকাওয়াস্তে নির্বাচনের জন্য সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন, গায়েবি মামলায় সাজা প্রদানসহ যত রকমের হয়রানি-নির্যাতন আছে- তার সবকিছুই করছে। অতীতের দুই নির্বাচনের আগে শুধু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ই করেনি, ভোটকেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদেরও আগের দিন গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানেও দল ও জোট ভাঙাসহ বিরোধী দলের নেতাদের সরকারের পক্ষে ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। অতীতের মতো কিংস পার্টি করতে চেয়েছিল কয়েকটা। কিন্তু করতে পারেনি। তাছাড়া শত চেষ্টা করেও বিরোধী দলের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকেই দলত্যাগ করাতে পারেনি।

মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, অতীতের দুটি নির্বাচনে তারা যেভাবে ভোট ডাকাতি করেছে- সামনের নির্বাচনে আর আওয়ামী লীগ এসব করতে পারবে না। বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয় পুলিশ দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। আর সেখানে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী দূরের কথা, কোনো সমর্থক পর্যন্ত যেতে পারছেন না। বিএনপি অফিসের সামনে যে-ই যাচ্ছেন- তাকেই পুলিশ আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কেউ যদি মনে করেন দেশে আওয়ামী লীগের স্লোগান অনুযায়ী নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু হবে- তা হবে চরম হাস্যকর। তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও কারাবন্দি করে খালি মাঠে নির্বাচন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু এতে আর এবার কাজ হবে না। কারণ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির চার-পাঁচ স্তরের নেতারা এখন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে কর্মীরাই দলের নেতৃত্ব দেবেন, তবুও আন্দোলন বন্ধ হবে না। ব্যারিস্টার খোকন আরও বলেন, আসলে আওয়ামী লীগের চরিত্রই পরিবর্তন হয়ে গেছে। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে দলটি। তারা আজ সম্পূর্ণভাবেই জনবিচ্ছিন্ন। পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমননীতি চালিয়ে আবারও ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু এবার আর তা সম্ভব হবে না। কারণ দেশের সব বিরোধী দলসহ সাধারণ মানুষ আজ জেগে উঠেছে। আন্দোলন চলছে, চলবে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাবে। ’৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আওয়ামী লীগ যেভাবে আন্দোলন করেছিল এবং যা যা কর্মসূচি দিয়েছিল- বিএনপিও এবার সেই ধরনের সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী, প্রয়োজনে আরও কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি পালন করা হবে। গণআন্দোলনের মাধ্যমে জনতার বিজয় এবার নিশ্চিত।

সর্বশেষ খবর