বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জোটের সমীকরণ এখনো মেলেনি

ধীরে চলো নীতিতে আওয়ামী লীগ

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত

এখনো মেলেনি জোট ও ভোটের হিসাব। আওয়ামী লীগ এককভাবে প্রার্থী দিয়েছে ২৯৮টি আসনে। এখন ১৪ দলের শরিকদের কতটি আসন ছেড়ে দেওয়া হবে, নাকি তারা এককভাবে নির্বাচন করবে সেটা নিশ্চিত হয়নি। ১৪ দলীয় জোট ছাড়াও ‘ভোটের জোটের’ কারণে কয়েকটি আসন ছাড়তে পারে আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে কাদের কপাল পুড়ছে, কাদের কপাল খুলছে-  তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। কাল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন হলেও ধীরে চলো নীতিতে এগোতে চায় আওয়ামী লীগ। পরিস্থিতির আলোকে জাতীয় পার্টিকেও ছেড়ে দেওয়া হতে পারে কিছু আসন। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপির ভোটে আসা না আসার ওপর। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার আশাবাদ ভোটে বিএনপি অংশ নেবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কাল নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। পরশু দলটির নীতিনির্ধারকরা শুরু করবেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ। এটি চলবে ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত। এর মধ্যেই জোটের শরিকদের সঙ্গে চলবে আলোচনা-পর্যালোচনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনবোধে জোটের শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সমন্বয় করা হবে।

গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের জোট আছে। ১৪ দলে কারা কারা নমিনেশন চান সেটি দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। এর মধ্যে যেখানে যা করা প্রয়োজন তা করব। ৩০০ আসনেই নৌকার প্রার্থী থাকবে। প্রয়োজনবোধে পরিস্থিতি অনুযায়ী জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সমন্বয় করা হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার পাশাপাশি জোটবদ্ধ নির্বাচন করার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়ার পর শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই গত রবিবার ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় জোটগত নির্বাচন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এ ছাড়া বিএনপিসহ বেশকিছু নিবন্ধিত দল নির্বাচনে না এলে এবারের নির্বাচনে জোটগত লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না সেটি নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলোচনা। জানা যায়, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট এবং মহাজোটের বিকল্প ধারা ও জাতীয় পার্টিকে মোট ৩১টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরসহ ২৩ জন, রাশেদ খান মেননসহ ওয়ার্কার্স পার্টির তিনজন, হাসানুল হক ইনুসহ জাসদের তিনজন, মাহি বি চৌধুরীসহ বিকল্পধারার দুজন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সংসদ সদস্য হন। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনের মধ্যে কেবল দুটি আসন খালি রেখেছে আওয়ামী লীগ। আসন দুটি হলো- কুষ্টিয়া-২ আর নারায়ণগঞ্জ-২। কুষ্টিয়া-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির এ কে এম সেলিম ওসমান। এ দুটি ছাড়া ১৪ দল ও মহাজোটের অন্যান্য শীর্ষ নেতার আসনেও দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মহিবুর রহমানকে, জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের লালমনিরহাট-৩ আসনে মতিয়ার রহমান, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে নাসিরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের চট্টগ্রাম-৫ আসনে আবদুস সালাম এবং কাজী ফিরোজ রশীদের ঢাকা-৬ আসনে সাঈদ খোকনকে প্রার্থী করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-৮ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২ আসনে মোহাম্মদ আলী, বিকল্পধারার মাহি বি চৌধুরীর মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মান্নানের লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর চট্টগ্রাম-২ আসনে খাদিজাতুল আনোয়ার ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পিরোজপুর-২ আসনে কানাই লাল বিশ্বাসকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৯৮ আসনের যে মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এটিই চূড়ান্ত তালিকা নয়। একক নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য এ তালিকা। আওয়ামী লীগ এখনো আগামী সংসদ নির্বাচনের কৌশল চূড়ান্ত করেনি। প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার আগ পর্যন্ত সুযোগ রয়েছে মনোনয়ন পরিবর্তনেরও। ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পার হলে আসন সমঝোতার বিষয়ে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক আলোচনা। এসব বিষয় নিয়ে নানামুখী আলোচনা হলেও আসন সমঝোতা নিয়ে আশাবাদী ১৪ দলের শরিকরা। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জোটের প্রয়োজন আছে, জোটের প্রয়োজন থাকবে। জোটের বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। তবে আমরা আশা করছি, আলোচনা করে সবার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।  জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তারা মনোনয়ন দাখিলের পর আমাদের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবে। আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে। কারণ যত দ্রুত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে তত দ্রুত অনিশ্চয়তা ঝেড়ে ফেলে প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নামতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর