বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ

জনশুমারির চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার, নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ৮ হাজার ১২৪ জন। তবে দেশে গড় বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে ১.২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; যা ২০১১ সালে ছিল ১.৪৭ শতাংশ। মোট জনসংখ্যার মধ্যে রাজধানী  ঢাকাতেই বসবাস করেন সাড়ে ৪ কোটি মানুষ। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর ‘ন্যাশনাল রিপোর্ট’ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিবিএস জানায়, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ পল্লীতে এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। এ ছাড়া জনসংখ্যার মধ্যে পল্লী অঞ্চলে বসবাস করেন ১১ কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৪ জন। শহরের বাসিন্দা ৫ কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ১০৭ জন। মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার তিনজন ও নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ জন। শতকরা হিসেবে পুরুষ ৪৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও নারী ৫০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি।

বিভাগভিত্তিক উপাত্ত পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সমন্বয়কৃত মোট জনসংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৬ জন, পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রামে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার, রাজশাহীতে ২ কোটি ৮০ হাজার, রংপুরে ১ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার ৭১, খুলনায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৩ হাজার ২১৮, ময়মনসিংহে ১ কোটি ২৬ লাখ ৩৭ হাজার, ৪৭২ সিলেটে ১ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ১১৩ এবং সবচেয়ে কম বরিশালে ৯৩ লাখ ২৫ হাজার ৮২০ জন।

বিবিএস জানায়, মোট জনসংখ্যার মধ্যে রাজধানী ঢাকাতে বসবাস করেন ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৬ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে বসবাস করেন ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ৬১২ জন, রাজশাহীতে ২ কোটি ৭ লাখ ৯৪ হাজার ১৯ জন, রংপুরে ১ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার ৭১ জন, খুলনায় বাস করেন ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৩ হাজার ২১৮ জন, ময়মনসিংহে ১ কোটি ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭২ জন, সিলেটে ১ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ১১৩ জন এবং সবচেয়ে কম জনসংখ্যা বরিশালে বসবাস করেন ৯৩ লাখ ২৫ হাজার ৮২০ জন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদ। মূল রিপোর্ট উপস্থাপন করেন জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ এর প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন ও উন্মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন বিবিএসের যুগ্মসচিব ড. দিপংকর রায়। উল্লেখ্য, দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

প্রবাসে সবচেয়ে বেশি নাগরিক চট্টগ্রাম বিভাগের, কম রংপুরের : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ৫০ লাখ ৫৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন বলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলেছে, সবচেয়ে বেশি মানুষ গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে। সবচেয়ে কম মানুষ গেছেন রংপুর বিভাগের। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি মানুষের সংখ্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, বিদেশে এখন ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। যদিও গতকাল বিবিএস জানাল, এই সংখ্যা ৫০ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৮ জন। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে দুটি প্রতিষ্ঠানের দুই ধরনের তথ্য নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব দীপংকর রায় সাংবাদিকদের বলেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিবিএসের এ তথ্য তুলনা করা ঠিক হবে না। বিবিএসের এ তথ্য শুধু শুমারিকালীন যারা বিদেশে অবস্থান করছিলেন, তাদের তথ্য। যখন শুমারি হয়েছিল, তখন পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ছয় মাস আগে কেউ বিদেশ গেছেন কি না। এখানে শুধু তাদের তথ্য নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রবাসীর সংখ্যা নিয়ে আমার কোনো জবাব নেই। গত বছরের জুন মাসে যখন শুমারি হয়, তার ছয় মাস আগে যারা প্রবাসে গেছেন, শুধু তাদের তথ্য নেওয়া হয়েছে। এর আগে যারা বিদেশে গেছেন, তাদের তথ্য আসেনি। প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বিতর্কমুক্ত থাকুক। জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে বেশি নাগরিক বিদেশে অবস্থান করছেন। তাদের সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৫২ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন ঢাকা বিভাগের ১৪ লাখ ৩১ হাজার। তৃতীয় অবস্থানে আছেন সিলেট বিভাগের ৫ লাখ ৭৩ হাজার। সবচেয়ে কম বাংলাদেশি বিদেশে অবস্থান করছেন রংপুর বিভাগের মানুষ মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার। এরপর আছেন ময়মনসিংহ বিভাগ ১ লাখ ৫৪ হাজার। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত দুই বছরে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন ৪ লাখ ৬৬ হাজার মানুষ। ফেরার তালিকায় প্রথমেই আছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দারা। তাদের সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার। ফেরার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দারা। তাদের সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার। এরপর আছেন খুলনা বিভাগের। তাদের সংখ্যা ৩৯ হাজার।

দেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে : দেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। ২০১১ সালেও যেখানে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। বিবিএসের তথ্য মতে, ৭৪ দশমিক ৮০ শতাংশ সাক্ষরতার মধ্যে পুরুষ ৭৬ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং নারী ৭২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। একই বয়সে জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দেশের পল্লী এলাকায় সাক্ষরতার হার ৭১ দশমিক ৬৮ ও শহর এলাকায় ৮১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সাত বছরের ওপরে দেশের মোট জনসংখ্যার এক দশমিক ১৭ শতাংশ প্রথম শ্রেণি শেষ করেনি। দুই দশমিক ৩২ শতাংশ প্রাক-প্রাথমিক পর্যন্ত পড়েছে। প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে এক দশমিক ৭৩ শতাংশ। প্রাথমিক শিক্ষা, অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে ২৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করছে ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। এসএসসি পাস করেনি সাত দশমিক আট শতাংশ। এসএসসি পাস করেছে আট দশমিক ৮২ শতাংশ। এইচএসসি পাস করেছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। ডিগ্রি বা স্নাতক পাস করেছে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১১ সালে স্নাতক ডিগ্রিধারী ছিল এক দশমিক ৯২ শতাংশ। স্নাতকোত্তর অর্জন করেছে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ, যেখানে ২০১১ সালে মাস্টার ডিগ্রিধারী ছিল শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর