বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এক মাসে পুড়ল ২২৩ গাড়ি

আজ ফের অবরোধ কাল হরতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধে গত এক মাসে ২২৩টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে সপ্তম দফায় অবরোধের দ্বিতীয় দিন গত সোমবার থেকে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। অন্যদিকে, টানা আন্দোলনের অষ্টম দফায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে আবারও দুই দিনের হরতাল-অবরোধ। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সকাল ৬টা থেকে কাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। আর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে পালন করবে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতার পাঁচটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এসব ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকা, হবিগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও খুলনায়। এ সময় পুড়েছে একটি ট্রেনের বগি, তিনটি বাস ও একটি ট্রাক। আগুনের ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ও ৫০ জন কর্মী। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণখান এলাকায় গতকাল দুপুরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভায়। আগুনে ট্রাকটির সামনের অংশ পড়ে গেছে। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে শান্তিবাগ এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৮ নভেম্বর এক মাসে ফায়ার সার্ভিস ২২৩টি আগুনের সংবাদ পায়। এসব আগুনের ঘটনায় যানবাহনসহ বেশ কিছু স্থাপনাও পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৩২টি বাস, ৩৫টি ট্রাক, ১৬টি কাভার্ড ভ্যান, আটটি মোটরসাইকেল, দুটি প্রাইভেট কার; তিনটি করে মাইক্রোবাস, পিকআপ, সিএনজি, ট্রেন ও লেগুনা এবং একটি করে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, পুলিশের গাড়ি, নছিমন ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, যানবাহনের পাশাপাশি ১১টি স্থাপনায় আগুন দিয়েছে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। এর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ অফিস, বিএনপি অফিস, পুলিশ বক্স, কাউন্সিলর অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার ও শোরুম।

সপ্তম দফা অবরোধের শেষ দিন সোমবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাতে সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডারবাহী গাড়ি ও জরুরি ওষুধ পরিবহন এসব কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সপ্তম দফায় বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয় রবিবার ভোর ৬টায়। যা শেষ হয় মঙ্গলবার সকাল ৬টায়।

বর্তমান সরকারের পতন ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি। তাদের জোটসঙ্গীসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোও একযোগে এসব কর্মসূচি পালন করছে।

২৪ ঘণ্টায় র‌্যাবের জালে ২১ : যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় জামালপুর জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাজ উদ্দিন এবং ময়মনসিংহের নান্দাইল এলাকা থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি হাজী আশরাফ হোসেন পাবেলকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সদর দফতর। তবে গত ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে হামলা ও নাশকতাসহ পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে গতকাল পর্যন্ত ৭৮৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এলিট ফোর্সের মিডিয়া উইং। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে বাধা ও নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। এরপর ৩১ অক্টোবর ভোর ৬টা থেকে প্রথম দফায় সারা দেশে তিন দিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ শুরু করে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলো। পরের দফায় ৫ ও ৬ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলে। তৃতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ৮ নভেম্বর সকাল ৬টায় শুরু হয়ে ১০ নভেম্বর সকাল ৬টায় শেষ হয়। চতুর্থ দফার অবরোধ শুরু হয় ১২ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে, যা শেষ হয় ১৪ নভেম্বর সকাল ৬টায়। পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলে ১৫ ও ১৬ নভেম্বর। এরপর নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা টানা ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি চলে ২১ ও ২২ নভেম্বর পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর