বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিএনএম মহাসচিব ড. শাহজাহান

আমরাই হব বিরোধী দল

হাসান ইমন

আমরাই হব বিরোধী দল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান বলেছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারে তাহলে বিএনএম সরকার গঠন করতে না পারলেও আমরাই বিরোধী দল হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করব। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গত মঙ্গলবার গুলশানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ড. শাহজাহান জানান, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনএম এ বছর নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হয়েছে। দলীয় প্রতীক পেয়েছে নোঙর। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষ করা হয়েছে। এখন প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তের কার্যক্রম চলছে। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত- বাংলাদেশ প্রতিদিন : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী  আন্দোলন (বিএনএম) অংশগ্রহণ করছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্য কি, সরকার গঠন, নাকি বিরোধী দল হবেন?

মো. শাহজাহান : সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের আরেকটা সূচক। কিন্তু দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না জনগণের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। সেটা আমরা যে করছি না তা-ও নয়। আমরা নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে থাকব কি না সেটা নির্ভর করবে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের আচরণের ওপর। তারা যদি জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে তাহলে আমরা চিন্তা করব নির্বাচনী মাঠে থাকব কি না। তবে এখন পর্যন্ত আমরা আশাবাদী সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা আশাবাদী সরকার গঠন করব। কারণ ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা যেভাবে তলানিতে ঠেকেছে, সেখানে তাদের যত হেভিওয়েট প্রার্থীই থাকুক না কেন তিনি পরাজিত হবেন। সেখানে আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসতে পারবে। তবে আমরা সিলেক্ট করে প্রার্থী দিয়েছি। যাই হোক না কেন আমরা আশাবাদী, বিরোধী দল হিসেবে সংসদে থাকব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি কেমন চলছে?

মো. শাহজাহান : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এখন নির্বাচনি ট্রেনে রয়েছে। আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ। এরই মধ্যে আমরা মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ করেছি। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার চৌকশ, মেধাবী ও রাজনৈতিক যোগ্য মানুষেরা মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৬৬টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সাবেক সংসদ সদস্য এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বড় নেতারা আমাদের ফরম সংগ্রহ করেছেন। এখন চলছে সাক্ষাৎকার ও প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ। এরই মধ্যে অনেককে মনোনয়ন চূড়ান্ত করে এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রার্থী ঘোষণার অপেক্ষায়। সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। এত স্বল্প সময়ে বিএনএম সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আস্থা কুড়াতে পেরেছে। সবারই নজর এখন বিএনএম-এর দিকে। আশা করি মানুষের আস্থা আমরা রাখতে পারব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন?

মো. শাহজাহান : আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্তে নতুন নিবন্ধন পাওয়া দল হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে আমরা খুবই জনপ্রিয়। নতুন দল হিসেবে যথেষ্ট মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। তবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা থাকলেও সেটা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আমরা চৌকশ ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেব। সে হিসেবে সব আসনে সে রকম যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি। ৩০০ আসনের মধ্যে কিছু আসন ছেড়ে দিতে পারি। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শক্তিশালী প্রার্থী পাওয়া গেলে ৩০০ আসনেও দিতে পারি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : যেসব প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বা পাবেন নির্বাচনি মাঠে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কেমন? তারা জয়ী হওয়ার ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?

মো. শাহজাহান : বিএনএম নিবন্ধন পাওয়ার পর সব শ্রেণি-পেশার মানুষ দলে দলে এই দলে যোগ দিচ্ছেন। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মেয়র, সাবেক বিচারপতি, সাবেক ঊর্ধ্বতন ডিফেন্স কর্মকর্তা, সাবেক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, শোবিজ জগতের জনপ্রিয় বেশ কয়েকজন তারকা, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী, সাবেক ও বর্তমানে রানিং উপজেলা চেয়ারম্যান, কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সংগীতশিল্পী দলে যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। আমরা এমন প্রার্থী মনোনীত করেছি যাদের নির্বাচনী এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। রাজনৈতিক, শিক্ষাবিদ, শিল্পপতিসহ যাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নদান করা হয়েছে তারা আগে থেকে এলাকার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যেহেতু প্রার্থীরা জনগণের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সাধারণ মানুষ তাদের সঠিক মূল্যায়ন করবে। আমি শতভাগ আশা করি আমাদের প্রার্থীরা জয় নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বলেছিলেন দলে আপনাদের চমক থাকবে। এখন পর্যন্ত কারা দলে যোগ দিয়েছেন এবং সাড়া কেমন?

মো. শাহজাহান : আমরা এরই মধ্যে চমক দেখিয়েছি। আমাদের মতো কোনো দল চমক দেখাতে পারেনি। প্রথম দিনে ৫/৬ জন সাবেক সংসদ সদস্য যোগদান করেছেন। এরপর সাবেক বিচারপতি, সাবেক ঊর্ধ্বতন ডিফেন্স কর্মকর্তা, সাবেক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৪ জন যোগদান করেছেন। এর পরের দিন আর দুজন হেভিওয়েট নেতা যোগ দিয়েছেন। সবশেষ গত মঙ্গলবারও আরেকটি চমক ছিল। স্বতন্ত্র দুইবারের সংসদ সদস্যও যোগদান করেছেন। একই সঙ্গে ডলি সায়ন্তনীসহ শোবিজ জগতের জনপ্রিয় বেশ কয়েকজন যোগ দিয়েছেন। আমি আশা করি এই চমক চলতে থাকবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা কেমন? সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবে কি?

মো. শাহজাহান : অতীতের সব নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন, জাতীয় সংসদের ও উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনসহ বেশ কিছু নির্বাচন হয়েছে। সেসব প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। সুতরাং জাতীয় নির্বাচনে ওনারা কতটুকু যেতে পারবেন, কতটুকু আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারবেন সে বিষয়ে আগাম মন্তব্য করব না। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভয়ংকর অ্যাসিড টেস্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে যদি তারা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে না পারেন, তাহলে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও বিশ্বাসের জায়গায় আর কখনো আসতে পারবেন না।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : যদি নির্বাচন সুষ্ঠু না হয় তাহলে আপনাদের নির্বাচন-পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?

মো. শাহজাহান : সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আন্তরিক না হয় এবং একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারে তাহলে আমরা অবশ্যই প্রতিবাদ করব। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে না পারলে এটা হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী। ভুল পথে পা বাড়ালে নির্বাচন কমিশনও তখন সরকারের মতো সমস্যায় পড়বে। আমরা মনি করি, এ নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। তারপরও আশা করি তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে। সে আশা রেখেই আমরা নির্বাচনে এসেছি। তারা যদি আগের নির্বাচন কমিশনগুলোকে অনুসরণ করে তাহলে আমরাও চুপ থাকব না। কারণ আপনারা দেখেছেন দল এখন মর্যাদাপূূর্ণ জায়গায় রয়েছে। একবারে নিচের স্তর পর্যন্ত আমাদের কমিটি রয়েছে। আর আমরা ঘুরে দাঁড়ালে সেটা সরকারের জন্য সুখকর হবে না। নির্বাচন কমিশনের জন্যও সুখকর হবে না। দেশের মানুষ সরকারের ওপর আস্থা রেখেছে এই কথা কখনো তারা বলতে পারবে না।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এ দেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিরা প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। সে বিষয়ে আপনাদের মনোভাব কী?

মো. শাহজাহান : সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলো দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তবে তারা এ দেশে একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাইছে। সেটা আমরাও চাইছি। এই জায়গায় আমরা একমত। তারা মানবাধিকারকে স্থিতিশীল দেখতে চায়। আমরাও তা চাই।

 তারা দেশের টেকসই উন্নয়ন চায়। আমরাও তাই চাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত থাকুক তারা চায়। সুতরাং তাদের সঙ্গে এই জায়গাটায় আমাদের কোনো প্রার্থক্য নেই। আমরা যা চাই, আমাদের সহায়ক হিসেবে তারাও চায়।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নতুন দল হিসেবে আপনাদের আবির্ভাব। সে হিসেবে দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা কেমন? নির্বাচনি মাঠে আপনাদের প্রভাব কেমন থাকতে পারে?

মো. শাহজাহান : একেবারই নতুন দল বলা যাবে না। আমরা ২০১৯ সাল থেকে দল গোছাচ্ছি। যদিও আমরা চলতি বছর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছি। আগেও দলের কমিটি ছিল। সবশেষ গত ২০ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ২০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির ১৬ জন সদস্য রয়েছেন। এই কার্যনির্বাহী কমিটিতে মহাসচিব ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পেয়েছি আমি ড. মো. শাহজাহান। আর সাংগঠনিকভাবে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। যেহেতু সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে আছি সুতরাং সংসদ নির্বাচনে আমাদের শক্ত ভূমিকা থাকবে। একই সঙ্গে মাঠেও আমাদের ভালো প্রভাব থাকবে বলে আশা করি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনারা বলেছিলেন চেয়ারম্যান পদে চমক আসছে। ইতোমধ্যে ১০ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো দলের চেয়ারম্যান পদটি খালি রয়েছে। কে হচ্ছেন নতুন চেয়ারম্যান?

মো. শাহজাহান : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এখন পর্যন্ত চমক দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ও অনেক নেতা আমাদের দলে যোগদান করেছেন। আমরা চমক দেখিয়েছি। আমাদের মতো কোনো দল এখন পর্যন্ত চমক দেখাতে পারেনি। তবে চেয়ারম্যান পদেও চমক আসছে। তিনি (নতুন চেয়ারম্যান) এখন পেছনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এখন তার নাম বলতে চাই না। তিনি অত্যন্ত মেধাবী, চৌকশ, সৎ এবং গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাঁর।

সর্বশেষ খবর