শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখা যাচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখা যাচ্ছে না

ড. ইফতেখারুজ্জামান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, তফসিল ঘোষণার আগে ও পরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, তা আমরা এবারও দেখতে পাচ্ছি না। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ৭৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শেষ পর্যন্ত এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় কারা অধিষ্ঠিত হবে তা হয়তো নির্ধারণ করার সুযোগ থাকবে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে জনগণের ভোটাধিকারের যে নির্বাচন তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এ নির্বাচন দিয়ে ভোটাধিকারের ওপর জনগণের আস্থা প্রতিষ্ঠা করাও অসম্ভব। প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক দলের সভানেত্রীর দায়িত্বে বহাল থাকায় নির্বাচনে দলীয় বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কি না? প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, যখন একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে তখন সেটি আর কোনো দলের সরকার থাকে না। দেশের সরকার হিসেবে নির্বাচিত হয়। সরকারপ্রধান যদি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দলীয় নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেন, তাহলে প্রতীকী অর্থে হলেও সব দলের সরকার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। সংসদের স্পিকারের ক্ষেত্রেও একই কথা। তিনি সব এমপির স্পিকার। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরপরই আমরা এ পরামর্শ দিয়েছিলাম, তবে কাজ হয়নি। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চার রাজনৈতিক অঙ্গীকারের লক্ষ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি টিআইবির পক্ষ থেকে ৭৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। লিখিত সুপারিশগুলো পাঠ করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কাউসার আহমেদ।

এতে বলা হয় : স্বাধীনতা-পরবর্তী একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে পরবর্তী ৫২ বছরে দারিদ্র্যমোচন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে বাংলাদেশ। তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা কাটানোর জন্য কোনো স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়নি। অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেছে। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক জোট ১৯৯১ সালে দেশের গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল। রাজনৈতিক জোট তিনটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিতর দিয়ে শাসনক্ষমতা গ্রহণ করে সার্বভৌম সংসদ গঠন, জবাবদিহিমূলক নির্বাহী বিভাগ প্রতিষ্ঠা, জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার ঘাটতির ফলে বারবার গণতান্ত্রিক পথ থেকে বিচ্যুতি ও নির্বাচনকালীন সহিংসতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে জনপ্রত্যাশা তা পূরণ হয়নি বলে ড. ইফতেখারুজ্জামান উল্লেখ করেন।

সর্বশেষ খবর