শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শ্রম খাতের ঘাটতি দূর করতে হবে

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রম খাতের ঘাটতি দূর করতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের শ্রম অধিকার নিয়ে এতটা উচ্চকণ্ঠ হওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। তবে পশ্চিমারা বলছে বলেই যে শ্রমিকের অধিকারের বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। এটা এমনিতেই আমাদের ঠিক করা উচিত। তাহলে এসব নিয়ে কেউ কথা বলার সুযোগ পাবে না। আমাদের ঘাটতির সুযোগ নিয়ে বাইরের একটা দেশ তাদের স্বার্থ উদ্ধার করবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, আমাদের গার্মেন্ট খাতের অর্জন অনেক। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রিন ফ্যাক্টরির মালিক বাংলাদেশ। ফ্যাক্টরির মালিকরা সচেতন হওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে। এটা না হলে হয়তো গ্রিন ফ্যাক্টরি নিয়েই অন্যরা বিভিন্ন কথা বলত। সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করত। এখানে শ্রম খাতে ঘাটতি আছে তাতে সন্দেহ নেই। সেগুলো আমাদেরই সমাধান করতে হবে। শ্রমিকের ন্যায্য বেতন, নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে যে ঘাটতিগুলো আছে, সেগুলো সমাধান করা দরকার। তাহলে এ ধরনের কথাবার্তা বলার সুযোগ কেউ পাবে না। ড. ইমতিয়াজ বলেন, শ্রমিকের অধিকারের বিষয়টা সংবিধানেই রয়েছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে এই কৃষক-শ্রমিকের অনেক ত্যাগ রয়েছে। এখানে তৃতীয় একটা দেশ যারা একাত্তরে আশপাশে ছিল না, শ্রমিক মারা যাচ্ছে, কৃষক মারা যাচ্ছে, জেনোসাইড হচ্ছে, সেখানে তারা কোনো কথা বলেনি, আজ হঠাৎ করে শ্রমিকের জন্য তাদের প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে, এই বিষয়টাই হতবাক করার মতো। এজন্য বিষয়টাকে অতটা গুরুত্ব দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে করি না, ঘাটতি যেটা আছে সেটা সমাধান করে এগিয়ে থাকাই যথেষ্ট। তবে প্রশ্ন হচ্ছে- তারা (পশ্চিমা বিশ্ব) হঠাৎ কেন এ ধরনের ইস্যু সামনে নিয়ে আসছে? এটা তারা আফ্রিকার ক্ষেত্রেও করেছে। কারণ আফ্রিকা এখন চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আফ্রিকানরা সরাসরি সমালোচনা করছে পশ্চিমা দেশের। ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর সামনেই আফ্রিকান নেতারা তাকে বলেছে, ‘তোমরা তো আমাদের শোষণ করেছ।’ এখানেই সমস্যা। আমাদের নেতা-নেত্রীরা অতটা সমালোচনা করেন না। তাই শ্রমনীতির বিষয়টা আমাদের নিয়েই বলেছে এটা মনে করার কারণ নেই। যেহেতু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রমনীতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে আমাদের এক শ্রমিকের নাম বলেছেন, এজন্য মানুষ ভাবছে হয়তো আমরাও ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছি। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ তো তারা নিতেই পারে। কিন্তু, এটাও সত্য যে, আমাদের যে মার্কেট আমেরিকায় তৈরি হয়েছে, এটা কারও দান-খয়রাতে হয়নি। আমরা তাদের যে লাভ দিতে পারছি, সস্তায় ভালো পোশাক দিতে পারছি, তা ভিয়েতনাম, ভারত, তুরস্ক বা শ্রীলঙ্কা দিতে পারছে না। সেই লাভটা তারা কেন হাতছাড়া করবে? এটা হতে পারে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে চাপ তৈরি করে আমাদের থেকে আরও কম দামে পোশাক নিতে চাইছে। কেন তারা এ অবস্থান নিয়েছে এ ব্যাপারে ভিতরের খবরটা জানা দরকার। সমস্যা হচ্ছে, আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতির প্রক্রিয়াটা অনেক জটিল। আর ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যদি আমরা যুক্ত থাকতে না পারি, সে ধরনের পেশাদারিত্ব যদি না থাকে, সে ধরনের জ্ঞান যদি না থাকে তাহলে ভিতরের খবর জানা সম্ভব নয়। তাই আমি মনে করি, আমাদের ঘাটতিগুলো দ্রুত সমাধান করা উচিত। শুধু সমাধান নয়, এ ক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে থাকা উচিত, যাতে বাংলাদেশকে রোল মডেল বলতে বাধ্য হয়।

সর্বশেষ খবর