শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আসন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় জাতীয় পার্টিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিগত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছিল সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির। জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল নেতারা আশা করেছিলেন এবারও তফসিল ঘোষণার আগেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা হবে, কিন্তু তা হয়নি। ফলে দলটির কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সব আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে। সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার আগে আসন সমঝোতা নিয়ে উভয় দল একাধিকবার বৈঠকে বসলেও সমঝোতা হয়নি। তবে, জাতীয় পার্টি আশাবাদী যে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনের আগেই এ বিষয়ে সমঝোতা হবে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে ৫০টি আসনে ছাড় চেয়েছে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির জন্য কমপক্ষে ৩৫টি আসন থেকে নৌকা প্রতীক প্রত্যাহার করবে। তবে শেষ পর্যন্ত আসন সমঝোতা না হলে নির্বাচন থেকেই সরে দাঁড়ানোর আলোচনা রয়েছে জাতীয় পার্টিতে। বিশেষ করে যারা বর্তমানে সংসদ সদস্য, তারা নৌকা প্রতীকের সঙ্গে লড়াই করতে নারাজ। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা না হওয়ায় জাতীয় পার্টিতে এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন কো-চেয়ারম্যান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী    ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা হতেই হবে। ৫০টি আসনে নৌকা প্রতীক প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলদের কাছে ছাড় চাওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলে জাতীয় পার্টি কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব।

জানা গেছে, বিগত তিন মেয়াদের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য বা আসন সমঝোতা করেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। তবে দেশে বিদেশে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে কৌশলের অংশ হিসেবে প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে দলটি। মূলত আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ীই জাতীয় পার্টি ২৮৯ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। জাপার দায়িত্বশীলরা বলছেন, দলটির বর্তমান ২৩ এমপির আসনে প্রাথমিকভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া দেন-দরবার শেষে আরও অন্তত ১০-১৫টি আসনও জাতীয় পার্টিকে ছাড়তে পারে ক্ষমতাসীনরা। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ৩২ থেকে ৩৫টি আসন ছাড় পেতে পারে। এক্ষেত্রে যে সব এমপি বিগত দুই মেয়াদে লাঙ্গল মার্কায় এমপি নির্বাচিত হয়েও বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় রাজপথে সক্রিয় ছিলেন তাদের আওয়ামী লীগ গুড বুকে রেখেছে। জাপার দায়িত্বশীলরা বলছেন, ৩২ বছর পর রওশনকে ছাড়াই নির্বাচনে নামল জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদ ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয়বারের সংসদ সদস্য। নির্বাচনে রওশন এরশাদের অনুসারী অনেক নেতাকে জাপার মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ কারণে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছেন রওশন এরশাদ। এদিকে জাপার মনোনয়ন না পেয়ে মসিউর রহমান রংপুর-১ আসনে ও জিয়াউল হক মৃধা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মসিউর রহমানের আসনে জাপার প্রার্থী মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। তিনি এরশাদের ভাতিজা ও সাবেক সংসদ সদস্য। জি এম কাদের দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একটি ঢাকা-১৭, অন্যটি রংপুর-৩ আসন। ঢাকার আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আর রংপুরে তুষার কান্তি মণ্ডল। এ ছাড়া জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে নাসিরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের চট্টগ্রাম-৫ আসনে আবদুস সালাম, কাজী ফিরোজ রশীদের ঢাকা-৬ আসনে সাঈদ খোকন, সৈয়দ আবু হোসেনের ঢাকা-৪ আসনে সানজিদা খানম, সালমা ইসলামের ঢাকা-১ আসনে সালমান এফ রহমানকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। এতে জাপার নেতাদের অনেকেই উৎকণ্ঠায় আছেন। জাপার নেতারা বলছেন, রওশন এরশাদবিহীন এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপাতত দলে জি এম কাদেরের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করল। তবে, গত কয়েকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে বেশকিছু আসনে সংসদ সদস্য হয়ে বিরোধী দলে ভালো অবস্থানেই ছিল জাতীয় পার্টি। এবার পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্ব আগামীতে জাতীয় পার্টিকে কোন অবস্থানে নিয়ে যায় সেটাই দেখার বিষয়।

সর্বশেষ খবর