শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কল্পনাদের বিলাসী জীবন নিয়ে বিস্ময়!

নিজস্ব প্রতিবেদক

গার্মেন্ট শ্রমিক নেতাদের বিলাসী জীবনযাপনের তথ্যে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এক তদন্তে দেশের কতিপয় গার্মেন্ট শ্রমিক নেতার ঘন ঘন বিদেশ সফর ও দেশে বিলাসী জীবনের বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে। একেকজন শ্রমিক নেতা বছরে শুধু বিদেশ সফরেই ব্যয় করছেন ১৪-১৫ লাখ টাকার বেশি। কোন আলাদিনের চেরাগের বদৌলতে কতিপয় গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা অর্থবিত্তে রাতারাতি এমন ফুলেফেঁপে উঠেছেন তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কোথা থেকে আসছে এত টাকা- এই প্রশ্ন এখন খোদ গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছে, গার্মেন্টকর্মীদের কষ্টের জীবন দেখিয়ে তাদের নেতারা বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল থেকে ফায়দা লুটছে না তো? বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টি তদন্তের দাবি উঠেছে। অভিযোগের প্রথম তীরটাই উঠেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট কল্পনা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার ও আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তারের দিকে। পোশাক শ্রমিকদের অধিকারকর্মী হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত নামগুলো। এমনকি বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ১৬ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে কল্পনা আক্তারকে উদাহরণ হিসেবে সামনে এনে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের কল্পনা আক্তারের মতো শ্রমিক এবং অধিকারকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’ এর পরই এই কল্পনা আক্তারের পরিচয় ও অধিকারকর্মী হিসেবে বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে ভূমিকা নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে বিভিন্ন মহল। তাতেই সামনে আসে বিস্ময়কর তথ্য!

মাত্র ১২ বছর বয়সে শিশু শ্রমিক হিসেবে গার্মেন্টে কাজ শুরু করা কল্পনা আক্তার বর্তমানে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস) নামের একটি এনজিও চালান। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখলেও তার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। গত বছরের ২৮ মে থেকে চলতি বছরের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ১২ বার বিদেশ সফর করেছেন। শুধু উড়োজাহাজ ভাড়াই গুনেছেন ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ টাকা। গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কাতার, ভারত, জাপান, দুবাইসহ অনেক দেশে। অন্যান্য খরচ ধরলে এসব ভ্রমণে তার খরচ হওয়ার কথা ৫০ লাখ টাকার বেশি। গার্মেন্টের ফ্লোর থেকে উঠে আসা একজন শ্রমিকের অধিকারকর্মী হয়ে বিদেশ ভ্রমণে এত বিপুল অর্থব্যয় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কিছুদিন আগেও যারা ছিলেন ২০ হাজার টাকা বেতনের গার্মেন্ট কর্মী, শ্রমিক নেতা হয়ে তারা কীভাবে রাতারাতি এত অর্থবিত্তের মালিক বনে গেলেন, তারা কত টাকা সরকারকে আয়কর দেন, কারা কোন উদ্দেশ্যে তাদেরকে অর্থ দিচ্ছে- এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহলে। সন্দেহ দানা বাঁধছে তাদের কর্মকাণ্ড ঘিরে। তাদের সম্পদের উৎস নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্তম্ভ গার্মেন্ট খাত কয়েকজনের ক্রিয়াকলপে ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খাবে। বেকার হবে লাখ লাখ গার্মেন্ট কর্মী। গার্মেন্ট শিল্পের নেতৃত্বে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এসব ব্যক্তির সম্পদের উৎস নিয়ে তদন্ত প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর