রবিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেটেই এলো সেরা জয়

♦ বাংলাদেশ (৩১০ ও ৩৩৮) ♦ নিউজিল্যান্ড (৩১৭ ও ১৮১) ♦ বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী

মেজবাহ্-উল-হক

সিলেটেই এলো সেরা জয়

বাংলাদেশ দলের প্রত্যেকটি জয়ের পর ড্রেসিংরুমে ক্রিকেটারদের ‘আমরা করব জয়’ কোরাস চলে! অবশ্য চাইলেই গতকাল সিলেটে এই গানের কথা খানিকটা ‘এডিট’ করে নিতে পারতেন টাইগাররা ‘আমরা করেছি জয়’! ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারিয়ে দেশের মাটিতে যেন সেরা জয়টি পেল টিম বাংলাদেশ। যদিও ১৩৯ ম্যাচ খেলে টাইগারদের পাওয়া ১৯ জয়ের প্রত্যেকটিই অনন্য! তবে কয়েকটি জয়কে আলাদা করে রাখতেই হবে। সব মিলে সেরা নিশ্চয়ই গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে পাওয়া নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়টি। কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শততম টেস্টে জয়টিও ‘বিশেষ কিছু’। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় দুটি ছিল দুর্দান্ত। প্রতিপক্ষ ও শক্তি বিবেচনায় হয়তো ঘরের মাঠে ওই দুটিই ছিল সেরা। কিন্তু পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলে সিলেটের কালকের জয়টির সঙ্গে অন্য কোনো জয়ের তুলনা হয় না। একে তো বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর সমালোচনার তীরে ক্ষত-বিক্ষত ক্রিকেটাররা। তার ওপর দলের সেরা ক্রিকেটাররা নেই। হাতের আঙুলে চিড় ধরায় এই ম্যাচে ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। পারিবারিক সমস্যার কারণে খেলতে পারেননি লিটন দাস। তামিম ইকবাল তো অনেক দিন থেকেই অনিয়মিত। দলের পেস আক্রমণের ভরসা সেরা দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেনও নেই। বাংলাদেশ নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে খেলতে নামে খর্ব শক্তির দল নিয়ে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনের কথা চিন্তা করে নিউজিল্যান্ড এসেছে পূর্ণশক্তির দল নিয়ে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেয়নি ব্ল্যাক ক্যাপসরা। এই নিউজিল্যান্ড বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন। কেবল বিস্ফোরক ব্যাটিং লাইনআপই নয়, দুর্দান্ত এক বোলিং আক্রমণ বিভাগ। স্পিনকে প্রাধান্য দিয়ে এবার কিউইরা এক বিশেষ ‘স্পিন-ব্রিগেট’ বানিয়েছিল। কিন্তু কোনো কৌশলই কাজ হলো না।

 ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলতে কিউইরা যে চক্রব্যূহ তৈরি করেছিল টাইগাররা তারুণ্যের শক্তিতে তা তছনছ করে দিল। খর্ব শক্তির এই দলটাই কিনা পূর্ণ শক্তির নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিল।

বাংলাদেশের টিম কম্বিনেশন ছিল দুর্দান্ত। ক্যারিশমেটিক পরিকল্পনাতেই এসেছে উড়ন্ত জয়। দুই ইনিংস মিলে ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ব্যাট হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নেতৃত্বের অভিষেক ম্যাচে শতক করে মাইলফলক স্থাপন করেছেন।

কিন্তু কী এমন মন্ত্র বলে দলকে উজ্জীবিত করেছেন শান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, দলকে বলেছি যে এই দুটি ম্যাচ আমরা জেতার জন্য খেলব এবং জিততে পারি, এই বিশ্বাস যেন থাকে। আমরা ওই চিন্তা করেই এসেছিলাম। ফলাফল নিয়ে আমরা অতটা চিন্তা করিনি। একটা কথা বলেছি যে, যতক্ষণ আমরা বর্তমানে থাকব, ওটাই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ওই মুহূর্তে আমাদের কী করতে হবে- এই বার্তাটাই সবাইকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’ বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টিম সাউদি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ বোলিং করেছে। তারা নিখুঁত ছিল।’ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ক্রিকেট নিয়ে ভক্তদের মাঝে যে খানিকটা বিতৃষ্ণা দেখা গিয়েছিল সিলেটের আগ্রাসী এই জয়ে যেন সমর্থকরা নতুন করে প্রাণ পেল। তাই তো কয়েক দিন আগেই সমালোচনার তীরে ক্ষতবিক্ষত শান্ত, মিরাজদের নিয়ে এখন স্যোশাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাসের পর স্ট্যাটাস দিচ্ছে ভক্তরা।

এটাই বাংলাদেশের ক্রিকেট। একটুতেই হতাশায় ভেঙে পড়ে, আর কোনো উপলক্ষ পেলেই আনন্দের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এখন এই আবেগে ক্রিকেটাররা নিজেদের প্লাবিত না করলেই হয়। অবশ্য দেশের মাটিতে পাওয়া সেরা জয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাসে দোষের কিছু নেই!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর